শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৩:৩০ দুপুর
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৩:৩০ দুপুর

প্রতিবেদক : আরমান হোসেন

সাবেক কানাডীয়ান কূটনীতিকের মতামত

কূটনৈতিক  চ্যানেলের বাইরে প্রতিক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয়

শওগাত আলী সাগর ও সৈয়দ সাদেক বলেন

সালেহ্ বিপ্লব: যে কোনো দেশের ব্যাপারে কথা বলার জন্য কার্যকর কূটনৈতিক চ্যানেল আছে, সেই চ্যানেলের বাইরে গিয়ে কথাবার্তা বলা বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ  গ্রহণযোগ্য নয়। সাবেক কানাডীয়ান কূটনীতিক সৈয়দ জুলফিকার সাদেক এই মতামত দিয়ে বলেছেন, কূটনৈতিক চাপ আর একটি দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের মধ্যকার সুক্ষ্ন পার্থক্যটা কোনো  রাষ্ট্রদূত বুঝতে না পারলে সেটি হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত হবে,সে ব্যাপারে কথা  বলার কোনো অধিকারই অন্যদেশের নেই। তবে উন্নয়ন সহযোগী বা বন্ধুদেশগুলো যথাযথ চ্যানেলে মাধ্যমে তাদের পরামর্শ বা মতামত প্রকাশ করতে পারে।  

‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর এর সঞ্চালনায় ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ এর আলোচনায় তিনি এই কথা বলেন।

স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ‘কূটনীতিকের দায় এবং দায়িত্বের সীমারেখা’ শীর্ষক এই আলোচনায় তিনি  বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কানাডা সরকারের হয়ে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনকালে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি কানাডীয়ান সৈয়দ জুলফিকার সাদেক তাঁর ৩৩ বছরের কূটনৈতিক জীবনে কানাডা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নয়াদিল্লিীসহ বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। আলোচনায় তিনি  বাংলাদেশের যাতে কোনো বিদেশি কূটনীতিক অসম্মানিত না হন বা নিরাপত্তাহীন বোধ না করেন সেটি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের দায় এবং দায়িত্বের সীমা রেখা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সৈয়দ জুলফিকার সাদেক বলেন, কোনো দেশে দায়িত্বপালনকালে একজন কূটনীতিকের কর্মপরিধি, দায় দায়িত্ব ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনে স্পষ্টীকরণ করা আছে। এটি আন্তর্জাতিক একটি চুক্তি  এবং এর বিধান অনসরণের বাধ্যবাধকতা আছে। এমন কি একজন কূটনীতিক তার নিজ দেশে যে সব তথ্য উপাত্ত পাঠাবেন সেটি গোপনীয়তার  বাধ্যবাধকতাও এই কনভেনশনে স্বীকৃত আছে। কাজেই একজন কূটনীতিক চাইলেই তিনি কোনো দেশ সম্পর্কে নিজ দেশে কী তথ্য পাঠাচ্ছেন তা মিডিয়ায় বা অন্য কোনো ফোরামে প্রকাশ করতে পারেন না।  

সাবেক কূটনীতিক সৈয়দ সাদেক বলেন, কোনো দেশে দায়িত্বপালনকালে রাষ্ট্রদূতরা কেবল সরকার বা সরকারের  মন্ত্রীদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখেন না,  বিরোধী দল, এনজিও, সুশীল সমাজ সহ নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।  কিন্তু কূটনৈতিকভাবে কোনো কিছুর জন্য চাপ দেয়া আর এমনভাবে কিছু বলা যেটি দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে- এই দুটি বিষয়ের মাঝে একটা সুক্ষ্ণ পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্যটা একজন কূটনীতিককে অনুসরণ করতে হয়। 
নয়াদিল্লীতে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সাবেক এই কানাডীয়ান কূটনীতিক বলেন,  তাঁর নয়াদিল্লিীতে দায়িত্বরত থাকা অবস্থায়ই গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়, কিন্তু সেই দাঙ্গা নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা ভারত সরকারের উদ্দেশ্যে কোনো বক্তব্য রাখেননি।

তিনি বলেন,  সে সময় কেন্দ্রে এবং প্রদেশে বিজেপি সরকার ক্ষমতায়।  কূটনীতিকরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন, নিজ নিজ দেশে পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন কিন্তু ভারত সরকারের সাথে এ নিয়ে কোনো আলোচনা বা প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া তারা দেখাননি। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত সরকার তাদের কোনো বিষয়ে কূটনীতিকরা কথা বলুক সেটা হতে দিতো না। তিনি বলেন, আমরা কূটনৈতক ভাষায় বলেছি- আমরা আশা করি সরকার সব জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। 

এই প্রসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের শাসনামলে একজন বৃটিশ কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ট্রাম্পের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করায় আমেরিকার চাপে তাকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় বৃটিশ সরকার। ভ্যানেজুয়েলায় আমেরিকান কূটনীতির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যানেজুয়েলার নির্বাচন যথাযথ হয়নি অভিযোগ করে আমেরিকা দেশের অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এমন কি বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত প্রতিনিধি- এমন ঘোষনাও দেয়। কিন্তু এখন আবার আমেরিকা নিজেরাই সেই সব নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়ে ভেনেজুয়েলার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

সৈয়দ জুলফিকার সাদেক বলেন, বাংলাদেশের গনতন্ত্র, মানবাধিকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার- এগুলো অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে। এবং এগুলো বাংলাদেশকেই করতে হবে। বাইরের কেউ এসে  করণীয় সম্পর্কে নির্দেশণা দিলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। 

আলোচনায় ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, রাজনীতিকরাই বিদেশিদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিসয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়। যখন যারা বিরোধী দলে থাকেন- তারা বিদেশিদের সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে দেশের স্বকয়িতা নষ্ট হয়। তিনি কূটনীতিকদের নিজস্ব সীমানায় থেকে বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়