সালেহ্ বিপ্লব: সরকারের নতুন প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে জানতে চাইলে এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, বিশ্বে এখন ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল প্রেজেন্স; দুটোই সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। ফিজিক্যাল অ্যাকসেসের ক্ষেত্রে যদি বলি, সরকার কিছু স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানকে কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) হিসেবে তালিকাভূক্ত করে। সেগুলোর মধ্যে বঙ্গভবন, নির্বাচন কমিশনের ভোটার ডাটাবেস, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থাকে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এই তালিকায় আরো নতুন প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভূক্ত হবে, এটা আগেই বলা হয়েছিলো। আমরা জানতাম। এতে কোনো অসুবিধা দেখি না। এটা বিদ্যমান তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। তবে একটা শংকা থাকে, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিককে অপরাধী করা হয় কি না। যদি সাংবাদিককে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হয়, সেটি খারাপ হবে।
এডিটরস গিল্ডের কার্যনির্বাহী সদস্য ও গ্লোবাল টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন যেটা আছে, সেখানে সাংবাদিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা আছে। নতুন করে আরো ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন স্ট্রাকচার (সিআইআই) ঘোষণা করার মধ্যদিয়ে এক ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হলো। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) বলা হয়, সেখানে তো সাংবাদিকরা যেতে পারবে না। এখন আশংকা থেকেই যায়, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা হেনস্তার শিকার হবেন কি না? সরকারের ক্লিয়ার করা উচিত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এই আইনের কতোটুকু প্রয়োগ হবে। তা না হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন বিধানটি গণমাধ্যমের জন্য নতুন ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আবির্ভূত হবে।
তিনি বলেন, সরকারের যে কোনো স্থাপনায় সাংবাদিকরা যেতে পারে। বঙ্গভবনে যেতে পারলে, গণভবনে যেতে পারলে অন্য স্থাপনায় যাওয়া যাবে না কেনো?
সম্প্রতি সাইবার আক্রমণ থেকে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো বা সিআইআই (ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার) হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। সাইবার নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮–এর ১৫ ধারার বিধানমতে এসব প্রতিষ্ঠানকে সিআইআই হিসেবে ঘোষণা করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও রয়েছে। তালিকায় আরও আছে সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডেটা সেন্টার ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইত্যাদি।
২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপনের অস্পষ্টতা দূর করার দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। তারা মনে করে, জারি করা প্রজ্ঞাপন স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নতুন চাপ ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ, ২৯টি প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট। এই প্রজ্ঞাপনের বিশদ স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। সম্পাদনা: এল আর বাদল
এসবি/আরবি/এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :