শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর, ২০২২, ০২:৪৭ রাত
আপডেট : ০৭ অক্টোবর, ২০২২, ০২:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাম্প্রদায়িক কষ্ট-ক্লেশ ও সমাধান প্রকৌশল

মাসুদ রানা

মাসুদ রানা: আমি মুসলমানদের ঈদে, হিন্দুদের পুজোতে ও ক্রিশ্চানদের ক্রিসমাসে শুভেচ্ছা জানাই। এর সাথে আমার সেক্যুলারিটি কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কারণ, সেক্যুলারিজম ধর্ম-বিরোধী নয়, বরং প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে। সেক্যুলারিজম যা বলে, তা হচ্ছে ধর্মকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সাম্প্রদায়িক চর্চায় রাখতে এবং রাষ্ট্র-পরিচালনায় তা না আনতে। এটি হচ্ছে রাষ্ট্র ও ধর্মকে দু’টো স্বতন্ত্র ও পৃথক বিষয় হিসেবে পরস্পর থেকে স্বাধীন রাখার নীতি।

গতকাল যখন বাঙালী হিন্দুর প্রধান ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপুজোর সমাপ্তি দিবস বিজয়া দশমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা পৌস্ট দিলাম আমার ফেইসবুকের পাতায়, তখন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে অনেকেই প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, যা স্বাভাবিক ও সৌহার্দ্যমূলক। ব্যতিক্রম একজন এসে আমাকে প্রশ্ন করেছেন দূর্গোপুজোর বর্তমান রূপের সাথে ইংরেজদের কাছে বাংলার মুসলিম নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ে হিন্দুদের আনন্দের উদযাপনের সাথে সম্পর্কিত সেটি আমি মানি কি-না।

আমি প্রশ্নকর্তার রাজনৈতিক ওরিয়েণ্টেইশন সম্পর্কে জানি না। আমার জানার প্রয়োজনও নেই। আমি প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের কোয়ালিফিকেইশনের ভিত্তিতেই বিচার করবো। কার স্বার্থে, কোন উদ্দেশে এই প্রশ্ন তিনি করেছেন, তা নিয়ে ভাবা ও প্লাটা প্রশ্ন করা আমি সঠিক মনে করি না। কারণ, এতে প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে প্রশ্নকর্তাকে ডিসক্রেডিটেড করা হয়। তাই আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি নিম্নলিখিতভাবে।

প্রশ্নঃ 
''পলাশীতে ইংরেজের জয় এবং সুবিধাপ্রাপ্ত বাঙালি হিন্দুদের বিজয়োল্লাসের জন্য শরতে প্রবর্তিত দুর্গাপূজার যোগসূত্র আপনি কি মানেন?'' উত্তরঃ ''যোগসূত্র থাকতে পারে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বর্তমান পালনের তাৎপর্য্য কী। আজ কি দূর্গাপুজো ইংরেজের জয় উদযাপনের জন্যে হচ্ছে? বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতায় একটি দূর্গাপুজোর থিম ছিলো তিতুমীর এবং মণ্ডপের সজ্জা ছিলো সেই বাঁশের কেল্লা, যা ইংরেজ ও অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলো। তো, এর দ্বারা কী বুঝায়? সমস্ত উদযাপনেরই একটি ইতিহাস থাকে, কিন্তু সমস্ত উদযাপনই সেই ইতিহাসকে উযাপন করে না। সমাজিক ফেনোমেনাকে যেমন ইতিহাসের প্রেক্ষিতে দেখতে হবে, এতমনি গতি ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে বুঝতে হবে।''

উপরের প্রশ্নোত্তর পড়ে একজন পাঠক অনুরোধ করলেন আমার উত্তরের কথাগুলো নিয়ে একটি স্বতন্ত্র পৌস্ট দেওয়ার জন্যে। ধারণা করি, তিনি চেয়েছেন কথাগুলো মন্তব্য আকারে যাতে হারিয়ে না যায়। আমার ধারণা, প্রশ্নকর্তার প্রশ্নটি কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়। এ-প্রশ্নটি হয়তো অনেকেরই। আমি মনে করি, হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ভেতরে পরস্পরের প্রতি যে দুঃখ,কষ্ট, অভিযোগ ও অভিমান কিংবা রাগ ও হিংসা আছে, সেগুলো আমাদের সকলেরই নিরাসক্তভাবে শোনা উচিত।

আমি মনে করি বাংলার দুই প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু-মুসলমানই শুধু নয়, বৌদ্ধ, ক্রিশ্চিয়ান-সহ সকল ধর্মীয় বা বিশ্বাস-সম্প্রদায়ের মনের কথা বলার ও শোনার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একমাত্র বলতে পারলে ও শুনতে পারলেই আমার বুঝতে পারবো আমাদের জানা-বুঝার মধ্যে কতোটুকু বস্তুনিষ্ঠ সত্যাতা আছে আর কতোটুকু অবিশ্বাস ও আশঙ্কা থেকে সৃষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, সাবাই যদি নির্ভয়ে ও নিঃসঙ্কোচে মনের কথাগুলো বলতে পারেন এবং অপর পক্ষ ধৈর্য্য ধরে শুনতে পারেন, তখন হয়তো আমরা দেখবো কীভাবে আমরা একে অন্যকে ভুল বুঝে মনে মনে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বাস হিসেবে লালন করছিলাম। 

দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে আমরা যদি একটি ভুল-নিরসনের আয়োজন করতে পারি সরল নিজেদের ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশ করে, সেটি আমাদের মনকে অনেকখানি ভারমুক্ত করবে। তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের প্রয়োজন হবে একটি সামাজিক প্রকৌশল, যার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রকৃত সৌহার্দ্য ও  সম্প্রীতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটাতে আমরা সক্ষম হবো। এ-রকম একটি কর্মসূচি আমাদের বাঙালীর দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্যে অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। আমার ধারণা, আমার মতো অনেকেই তা ভেবে থাকবেন বা ভাববেন এবং কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তারা এগিয়ে আসবেন। পাঠক, কী বলেন? আপনি কি এ-বিষয়ে আপনার সাধ্যমতো ভূমিকা রাখতে আগ্রহী? পক্ষে-বিপক্ষে যা-ই হোক, দয়াকরে মন্তব্য করুন! লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়