জেরিন আহমেদ: মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় আইপিনিউজ এর উদ্যোগে ”আদিবাসী সংবেদনশীল গণমাধ্যমঃ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত আলোচনা সভাটি বাংলা মোটর এ অবস্থিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ আলোচনা সভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাংবাদিক ও লেখক নজরুল কবির এবং লেখক ও গবেষক সারা মারান্ডী। আইপিনিউজ এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমীলা’র সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ।
পাভেল পার্থ আলোচনা সভায় বলেন, একটা লম্বা সময় গেছে, আদিবাসী এলাকায় গেলেই গরম হয়ে উঠেছে জাত্যভিমানী উপনিবেসীক কলম কী ক্যামেরা। দেশে যখন লকডাউন চলে তখনো চা বাগানের শ্রমিকদের সংগঠন চিঠি পাঠিয়ে ছুটির দাবি জানায়। এরই মধ্যে চা শ্রমিকদের মধ্যে দ্বৈত ভীতি ছিলো। একটি করোনা সংক্রমণের আরেকটি মজুরি না পাওয়ার।
এদিকে সরকারের আদিবাসী সম্বোধনে নিষেধাজ্ঞায় দেখা যায় মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া আছে। আদিবাসী এবং আদি বাসিন্দা দুটো সম্বোধন আলাদা আলাদা অর্থ ব্যক্ত করে। এটা এক ধরণের শ্রেণিগত সাংস্কৃতিক বৈষম্য। যখন বিষ্ণুপ্রিয় মণিপুরী ভাষার জন্য সুদেষ্ণা সিনহা শহীদ হয় তখন গণমাধ্যমে ফোনের বিজ্ঞাপন প্রচলিত হত আমরা ছাড়া কে দিয়েছে ভাষার জন্য প্রাণ। শালবন মধুপুরে ইকোপার্ক বিরোধী মিছিলে শহীদ হওয়া 'পীরেন স্নাল' এর নাম গণমাধ্যমে ঠিকমত লেখা হতো না।
সাংবাদিক নজরুল কবির বলেন, গণমাধ্যমের মালিকেরা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম এখন কর্পোরেট হয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে লড়াই করে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম কে শুধুমাত্র একটি বিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, লড়াই সাংস্কৃতিক হয় না। এটি একান্তই রাজনৈতিক। আমাদের মুখের লড়াই, চর্চার লড়াই, এক না। আমি পত্রিকায় টানা ২৯দিন আদিবাসীদের নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট করেছি। আমার কাছে তখন মনে হয়েছে কি হচ্ছে এই সিরিজ রিপোর্ট করে? তখন আমি আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ি।
আদিবাসীদের লড়াই কঠিন থেকে আরো কঠিনতর হচ্ছে দাবি করে এই সাংবাদিক আরো বলেন, যে মানুষকে আমি আদিবাসী দিবসে দেখেছি, বিভিন্ন ইভেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছে কয়দিন পর তাকে আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। কারণ তার তখন ভোটের দরকার ছিলো। আদিবাসীদের চ্যালেঞ্জের জন্য নতুন কৌশল তৈরী করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া, সৃজনশীলতা ব্যবহার করে সমাধান বের করতে হবে। নিজেদের জাতিস্বত্বা কে নিজেকেই দেখতে হবে। হয়তো প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় জাতিসত্তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরুন। নতুন কোনো কৌশল অবলম্বন করতে হবে। না হলে আদিবাসীদেরকে একাই এই লড়াইগুলো করতে হবে।
শতাধিক অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভার এক পর্যায়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মাদল এর সদস্য শ্যাম সাগর মানকিন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ সিংসহ প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :