২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। মাঝখানে দুই দফায় যুদ্ধবিরতি থাকলেও সম্প্রতি ফের হামলা জোরদার করেছে দখলদার বাহিনী। এতে ইতোমধ্যে ভূখণ্ডটিতে মৃতের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৬ গাজাবাসী।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পৃথক স্ট্যাটাস দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ ও মিজানুর রহমান আজহারী। বিষয়টি নিয়ে শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে স্ট্যাটাস দেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। এছাড়া রোববার (৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মিজানুর রহমান আজহারী।
ভেরিফায়েড পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে মিজানুর রহমান আজহারী লিখেছেন, ‘গত কয়েকদিনের ছবি এবং ভিডিও ক্লিপসগুলো দেখার পর এক অসহনীয় কষ্টকর সময় পার করছি। এর মাঝেও আমাদের করণীয় নিয়ে ভাবনা প্রয়োজন, আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। গোটা বিশ্বজুড়ে উম্মাহ আজ অনেক সমস্যায় নিমজ্জিত যার অন্যতম কারণ হলো- জাতি হিসেবে আমাদের নিজেদের পরিচয় ভুলে যাওয়া।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেছেন, ‘ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শুধু প্রতিক্রিয়াশীল জাতি না হয়ে আমাদের ক্রিয়াশীল জাতি হয়ে ওঠা প্রয়োজন। এর মাঝেই আমাদের মুক্তির পথ নিহিত। আমরা শুধু তাদের ব্র্যান্ডগুলো বয়কট করতে জানি কিন্তু আমাদের নিজেদের মানসম্মত কোনো ব্র্যান্ড নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষতার জন্য যে ডেডিকেশন দরকার তা আমরা করতে রাজি না।’
জনপ্রিয় এই বক্তা স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে শিক্ষা-গবেষণা ও পেশাদারিত্বে নিজেকে শক্ত অবস্থানে নেয়া, যোগ্য করে গড়ে তোলা মানেই সামষ্টিকভাবে গোটা উম্মাহকে শক্তিশালী করা। এজন্যই রাসূল ﷺ বলেছেন- দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। পক্ষান্তরে আমরা নানান আনপ্রোডাক্টিভ কাজে লিপ্ত থেকে সামগ্রিকভাবে গোটা উম্মাহকে দুর্বল করে চলেছি দিনের পর দিন। এভাবে চলতে থাকলে উম্মাহর সংকটময় মুহূর্তেও এই বিশাল জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে আসবে না। ঠিক যেমনটি এখন কোনো কাজে আসছে না।’
মিজানুর রহমান আজহারী আরও লিখেছেন, “আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন- ‘অনতিদূরে সকল বিজাতি তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যেমন ভোজনকারীরা ভোজপাত্রের উপর একত্রিত হয়। (এবং চারদিক থেকে ভোজন করে থাকে।)’ একজন বলল, ‘আমরা কি তখন সংখ্যায় কম থাকব, হে আল্লাহর রাসূল?’ তিনি (নবীজি) বললেন, ‘বরং তখন তোমরা সংখ্যায় অনেক থাকবে। কিন্তু তোমরা হবে তরঙ্গতাড়িত আবর্জনার ন্যায় (শক্তিহীন, মূল্যহীন)।’ [আবূ দাঊদ: ৪২৯৯]”
অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে দেয়া পোস্টে ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, ‘ঝোড়ো হাওয়ায় গাছের শুকনো পাতা যেভাবে আকাশে উড়ে যায়, বোমার আঘাতে পবিত্র ভূমির মানুষদেরকে সেভাবে আকাশে উড়তে দেখল বিশ্ববাসী। পৃথিবীর আটশ কোটি মানুষ, দুইশ কোটি মুসলমান, জাতিসংঘ, ওআইসি, আরববিশ্ব- কেউই হায়েনার হাত থেকে একটি জনপদকে রক্ষা করতে পারল না। বরং সবাই রোমের কলোসিয়ামের গ্যালারিতে বসে গ্ল্যাডিয়েটরদের মৃত্যু দেখার মতো যেন উপভোগ করছে এই বর্বরতা।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই বিশ্ব কতটা সভ্য আর মানবিক, তা পরিমাপের সবচেয়ে উপযুক্ত মিটার হলো ফিলিস্তিন। এই নির্মমতার দায় আমাদের সবার। একদিন আমাদের সকলকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মহান রবের কাছে চাওয়া শুধু একটাই- মৃত্যুর আগে এই জুলুমের শেষ যেন দেখে যেতে পারি।’