নাহিদ হাসান: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচনায় ছিল। গত ২৫ জুন সেতুর গেট খুলে দেওয়ার পর দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হয় সেই খবর। এবার প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের পাতায়ও উঠে এলো নব সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেওয়া এই সেতুটি।
‘ব্রিজেস টু লিবার্টি’ শিরোনামে দ্য ইকোনমিস্টের চলতি সপ্তাহের সংখ্যায় পদ্মা সেতু নিয়ে একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইন সংস্করণে তার শিরোনাম করা হয়েছে ‘নিউ ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার হেল্পস সাউথ এশিয়ান ওমেন ইনটু ওয়ার্ক’ অর্থাৎ, দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের কাজে সহায়ক নতুন পরিবহন অবকাঠামো। পাঠকদের জন্য লেখাটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
কয়েক দশক আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল হওয়া শুরু করলে অনেকেই ভাগ্যবদলের আশায় ঢাকায় ছুটতে শুরু করেন, যাদের একটি বড় অংশই নারী। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে কর্মরত ৪০ লাখ শ্রমিকের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী, যাদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ফরিদপুরের মতো শহরের লোকদের কাছে এ ধরনের কাজ লোভনীয় হলেও কর্মস্থলে পৌঁছানো ছিল কঠিন। কিন্তু এখন পদ্মা নদীর ওপর নতুন সেতুর কারণে সেই যাত্রা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় নেমে এসেছে।
প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি মার্কিন ডলার খরচে তৈরি এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত তিন কোটি মানুষের সরাসরি উপকার করবে, বিশেষ করে নারীদের। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ মুশফিক মোবারক বলেন, এ ধরনের প্রকল্পগুলো সবারই উপকার করে, তবে বেশি করে নারীরা, যাদের ভ্রমণ করার ক্ষমতা প্রায়ই রক্ষণশীল দক্ষিণ এশীয় সমাজে সীমাবদ্ধ থাকে। দূরত্ব যত বেশি, বাধাও তত বেশি।
পদ্মা সেতু থেকে নারীদের কী লাভ হতে পারে তা আগের একটি প্রকল্প নিয়ে নতুন গবেষণাতেই স্পষ্ট। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সংযোগ ঘটে, এতে ভ্রমণের সময় ব্যাপকভাবে কমে যায়। ওই অঞ্চলের যে শহরের বাসিন্দার আগে ১২ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাগতো গন্তব্যে পৌঁছাতে, তা মাত্র চার ঘণ্টায় নেমে আসে।
যুক্তরাজ্যের কেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখেছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের তুলনায় এ ধরনের এলাকাগুলোতে নারীদের অভিবাসন এবং পোশাক কারখানায় কাজ খোঁজার হার বেশি। তবে সেই সেতু রক্ষণশীল সামাজিক নিয়মকানুনের প্রভাব পুরোপুরি বন্ধ করেনি বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক জাকি ওয়াহহাজ।
তিনি বলেন, এ ধরনের নিয়মকানুন প্রায়ই নারীদের একা ভ্রমণে বাধা দেয়। অবিবাহিত বা সঙ্গীহীন নারীদের অভিবাসনের সংখ্যা বাড়েনি। যেটা পরিবর্তিত হয়েছে তা হলো, পরিবারগুলো তাদের মেয়েদের ঢাকামুখী পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়েছে। তারা মনে করছে, দূরের শহরটি কাছাকাছি চলে এসেছে। পরে এসব নারীর অনেকেই পোশাক শিল্পে কাজ নিচ্ছেন।
ড মোবারকের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব গ্রামের নারীরা গার্মেন্টসে গিয়ে একদিনের মধ্যে ফিরতে পারেন, সেখানকার বাবা-মায়েরা তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে বেশি আগ্রহী। এক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টা মেয়েদের জন্য স্বামী জোগাড় নয়, বরং চাকরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বলে মনে হয়।
এ গবেষক বলেন, ভারত ও পাকিস্তানে শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ নারী। বাংলাদেশে এর হার ৩৬ শতাংশ। এটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি অর্ধেক জনসংখ্যাকে উৎপাদনশীল করতে না পারেন, তাহলে তা প্রবৃদ্ধির পথে সবসময় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার মতামত লিখুন :