শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: [২] বাঙালির ভাষার মাসজুড়ে চলমান অমর একুশে বইমেলার শেষ সপ্তাহে এসে বেড়েছে বই বিক্রি। সোমবার শবে বরাতের সরকারি ছুটির দিনে দুপুর ১২টায় মেলার দুয়ার খোলার পরপরই বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিন শিশুপ্রহর না থাকলেও অসংখ্য শিশুদের দেখা গেছে তাদেও বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে।
[৩] বিকেল হতেই নামতেই বদলে যায় বইমেলার চিত্র। মাসব্যাপী বইমেলার শেষ ছুটির দিন হওয়ায় এদিন দর্শনার্থীদের ঢল নামে মেলা প্রাঙ্গণে। এতে বইমেলার প্রতিটি প্রবেশপথেই দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। মেলার প্রায় প্রতিটি প্রকাশনীর স্টল-প্যাভিলিয়নে ছিল পাঠকের উপস্থিতি। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্যদিনের চেয়ে বই বিক্রিও হয়েছে অনেক বেশি। মেলায় যারা এসেছেন তারা কমবেশি বই কিনেছেন। দর্শনার্থী-বইপ্রেমীদের এমন উপস্থিতি এবং বিক্রি বাড়ায় হাসিমুখ ছিল বিক্রেতাদেরও।
[৪] মেলায় আসা শিক্ষার্থী হাসনাত মিশু জানায়, আম্মুর সঙ্গে বইমেলায় এসে আজ সে অনেক মজা করেছে। হাসনাত রাজধানীর মহম্মদপুরে থাকে। সে দ্বিতীয় শেণির শিক্ষার্থী।
[৫] চিলড্রেন হ্যাভেন পাবলিকেশন্সের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ছুটির দিনে ভিড় বেশি থাকে। বই বিক্রিও বেশি হয়। এইদিন প্রায় দশ হাজার টাকা করে বা তার বেশিও বই বিক্রি হয় আর অন্য দিন তিন থেকে চার হাজার টাকার বই বিক্রি হয়।
[৬] মেলায় নিজের তৈরি তালিকা দেখে বই কিনছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাঈম হাসান। তিনি বলেন, ‘মেলা শুরুর পর থেকে ঘরে বসে তালিকা করেছি। নতুন বই সাধারণত মেলার মাঝামাঝিতে বের হয় বেশি। এ জন্য শেষ সপ্তাহে গিয়েই বই কেনার জন্য অপেক্ষা করি। এই সপ্তাহে বই কেনা শুরু করেছি।’
[৭] এদিকে, এক যুগ আগে প্রয়াত কথাসাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের আবেদন যেন এখনো কমেনি। মেলার শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবার মুখে মুখেই ছিলেন তিনি। বই বিক্রিতেও তার প্রভাব জোড়ালোভাবেই রয়ে গেছে। মেলার ২৬দিনে নতুন বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজার। অথচ এত বইয়ের ভিড়ে এখনও পাঠকপ্রিয়তায় শীর্ষে আছেন প্রয়াত এই সাহিত্যিক। প্রকাশনীগুলোতে তার লেখা বইয়ের বিক্রি এখনও আছে তালিকার শীর্ষে। যেন বইমেলায় না থেকেও আছেন হুমায়ুন আহমেদ।
[৮] লেখক ও প্রকাশকরা বলছেন, হুমায়ূন আহমেদ দেশের সাহিত্যাঙ্গনে যে জায়গা সৃষ্টি করে গেছেন, তা এখনও কেউ পূরণ করতে পারেননি। পুরোনোরা তো বটেই, নতুন প্রজন্মের পাঠক এসে এখনও হুমায়ূনের বই খোঁজেন।
[৯] এদিন অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নের সামনে হুমায়ূন আহমেদের বই দেখছিলেন সুষমা আর সপ্তর্ষী। বড় বোন সুষমা পেশায় ব্যাংকার। তিনি জানান, ১২ বছর বয়স থেকেই তার বই পড়ার অভ্যাস। ২০১০ সাল পর্যন্ত হুমায়ূনের লেখা সব বই পড়েছেন। ছোট বোন সপ্তর্ষী নতুন বই পড়া শুরু করেছেন। গত বছর মেলা থেকে ছোট বোনকে হুমায়ূনের চারটি বই কিনে দিয়েছেন। এবার কিনে দিয়েছেন ‘শঙ্খনীল কারাগার’ আর ‘নন্দিত নরকে’।
[১০] হুমায়ূনের পাঠকপ্রিয়তা প্রসঙ্গে অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও কোনো লেখকের সামগ্রিক বই বিক্রির সংখ্যায় হুমায়ূন আহমেদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। হুমায়ূন চেয়েছিলেন তার মৃত্যুর পরে পাঠকরা যেন তার বই কমপক্ষে দশ বছর পড়ে। হুমায়ূন চলে গেছেন এক যুগেরও বেশি সময় হলো। কিন্তু এখনও তার বই সমানতালে পাঠকপ্রিয়। আগামী পঞ্চাশ বছরেও হুমায়ূনের এই পাঠকপ্রিয়তা থাকবে।’ সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
আপনার মতামত লিখুন :