শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: [২] বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ছিলো মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এদিন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিলো। বিশেষ এই দিনে অমর একুশে বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে ওঠে। নারী দর্শনার্থীরা খোঁপায় বাহারি ফুল পরে আর পুরুষরা কেউ কেউ কালো পাঞ্জাবি পরে মেলায় এসেছিলেন। অনেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন শিশুসহ পুরো পরিবার। এমন রঙিন মুখরিত বইমেলা দেখলে কারই মনে হবে না দিনটি শোকের!
[৩] একুশের চেতনাকে ধারণ করে প্রতি বছর শুরু হয় বাঙালির প্রাণের আয়োজন অমর একুশে বইমেলা। মেলার প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণে একুশের চেতনা ও গ্রামীণ বিষয়বস্তুকে বরাবরই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এবারও স্টলগুলোতে একুশের ছোঁয়া লেগেছে। তবে, যেই ভাষা শহীদদের স্মরণে এই মেলা তাদের নিয়ে এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মেলায় খুবই কম।
[৪] মেলায় বেশ কিছু প্যাভিলিয়ন ও স্টলের নির্মাণে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে দেখা গেছে। কিছু প্যাভিলিয়ন ও স্টলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বর্ণমালা, রিকশাচিত্র, গ্রামীণ পরিবেশ প্রভৃতি।
[৫] বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বিভিন্ন স্টলে একুশের ছোঁয়া থাকলেও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে একুশের চেতনার ঘাটতি স্পষ্ট। এদিন বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিটি স্টলেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়। বড়দের সঙ্গে মেলায় শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। স্কুলপড়ুয়া অনেকে এসেছে বইমেলায়।
[৬] মেলায় আসা অবন্তিকা অনু নামে এক তরুণী বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় এসেছি। আজ সরকারি ছুটি থাকায় রাস্তাঘাটে জ্যাম কম। তাছাড়া সবাইকে নিয়ে একসাথে মেলায় আসার সময়ও কম পাওয়া যায়।
[৭] অর্থি নামের আরেক তরুণী বলেন, আমি প্রধানত ধর্মতত্ত্বের বই পড়তে বেশি পছন্দ করি। কিন্তু এ জাতীয় বই প্রকাশ করা তেমন প্রকাশনীর স্টল বইমেলায় নেই। তবে সালেক আল মাহমুদের এনহেদুয়ানা ও ইনানা নামের দুটি বই অনেক খোঁজাখুঁজির পর কিনতে পেরেছি।
[৮] ইশান বড়ুয়া নামে এক দর্শনার্থী বলেন, সকালে বন্ধুরা মিলে এসেছিলাম শহীদ মিনারে ফুল দিতে। পরে সবাই প্ল্যান করে বইমেলায় এসেছি। ছবি তুলেছি। অনেক মজা করেছি। তবে এখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া খাবারের মানও ভালো না।
[৯] বই কেনার প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনো কেনা হয়নি। বইমেলায় ঘুরতে ভালো লাগে। তাই এসেছি।
[১০] চারুলিপি প্রকাশনীর ম্যানেজার মাসুম পারভেজ বলেন, ‘মেলায় দর্শনার্থী অনেক কিন্তু ক্রেতা কম। অনেকেই আসছেন বই দেখছেন, পড়ছেন, ছবি তুলছেন কিন্তু আলটিমেটলি কিনছেন না। এটা আমাদের জন্য তো দুঃখজনক বটেই, পাশাপাশি লেখক এবং সংশ্লিষ্টদের জন্যও নেতিবাচক একটা বার্তা। আমি আশা করব শুধু দেখা বা ছবি তোলার মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে পাঠকরা বই কিনবেন।’
[১১] আদী প্রকাশনীর বিক্রেতা ইউসুফ খান বলেন, ‘সকাল থেকে বেশ ভিড়। কিন্তু বিক্রি অনেক কম। মানুষ এখন আর বই পড়ে না। সবাই মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকে। বই পড়ার সময় কোথায়?’ সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
আপনার মতামত লিখুন :