সালেহ্ বিপ্লব: সময়টা ১৯৮৮। ময়না তখন তুমুল জনপ্রিয়। এই ময়না হচ্ছে লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম হিট গান। অসাধারণ ছন্দময় গানটি লিখেছেন মিলন খান। আর ময়না দিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে গীতিকবি মিলন খানের পথচলা শুরু। এরপর আরো কতো কতো গান যে তিনি উপহার দিয়েছেন, সেই তালিকা অনেক দীর্ঘ, যেমন দীর্ঘ মিলন খানের বুকে জেগে থাকা সৃজনশীলতার ঢেউ। আর এই ঢেউয়ের নাচনই তাকে শৈশব থেকে গড়ে তুলেছে ছন্দ-সুরের নিপুণ কারিগর হিসেবে। জন্ম থেকেই পদ্মা মেঘনার মিলনরেখায় প্রমত্ত ঢেউয়ের খেলা দেখেছেন মিলন, দেখেছেন ডাকাতিয়ার নিরবধি বয়ে চলা। পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার শহর চাঁদপুরেই তার জন্ম, বেড়ে ওঠা।
চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ হাসান আলী স্কুল থেকে এসএসএসি, উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন চাঁদপুর কলেজে। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে বিএসসি (এজি) সম্মান পাস করেন। তারপর ঢাকার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ (মার্কেটিং)।
পাস করার পর প্রথম চাকরি চাঁদপুরের আশেক আলী খান কলেজে, প্রভাষক (কৃষি) হিসেবে। ১৯৯৫ থেকে তিন বছর শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯৮ থেকে পুরোপুরি মন দেন লেখালেখিতে. গানের ভূবনে।
২০০২ থেকে ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত এটিএন মিউজিকে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৮ থেকে ২০১১, আড়াই বছর শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির বিজনেস ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি ছিলেন।
এ পর্যন্ত সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন মিলন খান। অডিও, রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র- সবখানেই তার পদচারণা। দেশবরেণ্য প্রায় সব শিল্পী তার লেখা গান গেয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য গান: ময়না (আইয়ুব বাচ্চু), ডায়েরির পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলেছি, পাথর কালো রাত, তুমি নীলাকাশ, গাছের পাতার মতো ( তপন চৌধুরী), সাদা কাগজের পাতায় পাতায় লিখে, এই সেই বুকের জমিন (শুভ্র দেব), বিরহী প্রহর, নিতাইগঞ্জে জমছে মেলা ( ডলি সায়ন্তনী), মেঘের পালকি, ভুল গাঙে, বড়ো কঠিন এ দুনিয়া (সৈয়দ আবদুল হাদী), সাদা কাফনে আমাকে জড়াতে পারবে, আকাশ থেকে চেয়ে নিবো চাঁদের নীল টিপ ( রবি চৌধুরী), নীল জোনাকি, ভুলে যাও বন্ধু ( এন্ড্রু কিশোর), কারো কথাতে তুমি কান দিওনা মেয়ে, আমার স্বপ্নের নায়িকা তুমি ( আসিফ আকবর), সূর্যের আগুনে পুড়িনি আমি, গতকাল ও জানতাম তুমি শুধু আমার ( মনির খান) এবং আজ আকাশের মন ভালো নেই, কোনো অভিযোগ ছিলো না আমার, জীবন আমার নাটকের মতোন, ফুলে ফুলে সাজিয়ে দিও আমার চতুর্দোলা, আমি আমার দুঃখগুলো কোন ব্যাংকে দিবো জমা (এস ডি রুবেল)
সম্প্রতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে মিলন খানের লিখা, মেঘনা পারে যাবো নারে, গাইবো না আর গান। সেই সুবাদেই কথা হচ্ছিলো সৃজনশীল গানের কবি, কৃষিবিদ মিলন খানের সঙ্গে।
জানতে চাইলাম, সঙ্গীতের জগতে তো অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছেন। এই যে পথচলা, এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে কেমন লাগে?
জবাবে বললেন, বেশ ভালো লাগে। লেখাটা এখনো এনজয় করি।
পরের প্রশ্ন ছিলো, সঙ্গীত নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
মিলন খান বললেন, লিখতে চাই। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত যেনো লিখতে পারি।
শুভ কামনা জানিয়ে শেষ করার আগে প্রশ্ন, নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অসাধারণ অসংখ্য গানের জন্ম দেওয়া এই গীতিকবি জবাব দিলেন, ভালো কথা ও ভালো সুরের সাথে প্রেম করো।
আপনার মতামত লিখুন :