রাশিদ রিয়াজ : ইরানে এখন চলছে নওরোজ উৎসব।গত ২১ মার্চ বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। বিশ্বের ৩০ কোটির অধিক মানুষ ১৩ দিন ব্যাপী উদযাপন করবে এ উৎসব। প্রাচীন এই উৎসব পারস্যের নববর্ষ হিসেবে পরিচিত। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে মূলত বসন্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। বিদায় জানানো হয় অতীতকে।
নওরোজ অর্থ ‘নতুন দিন’। নতুন সূচনার একটি সর্বজনীন উদযাপন হিসেবেও এটি বিবেচিত। অতীতকে বিদায় জানিয়ে সামনের দিনগুলোতে সমৃদ্ধি কামনা করা এবং ভবিষ্যতেকে স্বাগত জানানোয় হচ্ছে এই উৎসবের মূল লক্ষ্য।
বড়দিন উদযাপনের সাথেও এটাকে তুলনা করা যায়। তবে বড়দিনের চেয়ে আরও অনেক কিছু জড়িয়ে আছে এই উৎসবের সাথে। নওরোজে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়, রাস্তায় বিভিন্ন গানবাজনা ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। মহল্লায়-মহল্লায় আনন্দ উৎসব চলে টানা কয়েকদিন ব্যাপী। সেই সাথে সুস্বাদু ইরানি খাবারের পসরাতো আছেই।
সহস্রাব্দ-পুরোনো উৎসবটি মূলত ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে পালিত হয়। সেইসাথে ভারত সহ যেসব দেশে ইরানের উল্লেখযোগ্য প্রবাসী জনসংখ্যা রয়েছে সেখানে পালন করা হয়। আমেরিকার বহু সম্প্রদায়ও এই উৎসব উদযাপন করে থাকে।
বিস্তরভাবে বলতে গেলে, বলকান থেকে কৃষ্ণ সাগর অববাহিকা এবং মধ্য এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত অনেক অঞ্চলে উৎসবটি পালিত হয়।
ইরান, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, ভারত, কাজাখস্তান, তুরস্ক এবং তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশগুলির অনুরোধে জাতিসংঘ ২০১০ সালে ২১শে মার্চকে আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত দেয়।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যমতে, নওরোজ সকল প্রজন্ম এবং পরিবারের মধ্যে শান্তি ও সংহতির মূল্যবোধের বার্তা নিয়ে আসে। পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক পুনর্মিলন এবং প্রতিবেশীত্বকে তুলে ধরে। মানুষ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বন্ধুত্বে অবদান রাখে উৎসবটি। এই কারণেই পারস্যের পরিবারগুলি এই সময়টাতে তাদের বাসাবাড়িগুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করে এবং নতুন পোশাক পরিধান করে থাকে।
ঐতিহ্যগতভাবে, ইরানিরা একটি নওরোজ টেবিল সাজায়। নানা রঙের খাবার আইটেম দিয়ে টেবিল সুসজ্জিত করা হয়। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে থাকে গোল্ডফিশ, গমের অঙ্কুর, মোমবাতি এবং আয়না।
রঙিন আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে ভেষজ, শুকনো বাদাম এবং ফল, গমের অঙ্কুর এবং ভিনেগার। সবকটি আইটেমের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে। যেমন নতুন বছরের জন্য বিভিন্ন আশার প্রতীক হিসেবে স্বাস্থ্য, সম্পদ এবং বিলাসিতা বুঝাতে বিভিন্ন রঙের জিনিস সাজানো হয়।
শিক্ষা এবং আলোকিতকরণের প্রতিনিধি হিসেবে টেবিলে পবিত্র কুরআন বা কবিতার বইগুলি রাখা হয়। সাধারণত গোল্ডফিশ সৌভাগ্যের জন্য সেখানে রাখা হয়।
নওরোজ বসন্ত বিষুব থেকে শুরু হয়। এসময়টায় সূর্য বিষুব রেখা অতিক্রম করে, দিন ও রাত সমান দৈর্ঘ্যের হয়। ইরানি ক্যালেন্ডার হলো একটি সৌর ক্যালেন্ডার। এতে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর ভিত্তি করে সময় নির্ধারণ করতে জ্যোতির্বিদ্যাগত পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করা হয়।
নওরোজ উপলক্ষে বাড়িঘরগুলো ঝকঝকে করা হয়। পরিবারের সদস্যদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অনেক লোক প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সাথে একত্রে দারুণ কিছু সময় কাটায়। দুই সপ্তাহ ধরে এই উদযাপন চলতে থাকে। বিভিন্ন পার্টি, পাবলিক আচার-অনুষ্ঠান এবং প্রচুর খাবার আয়োজনে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি।
ইরানিদের রয়েছে আমু নওরোজ এবং হাজি ফিরোজের মতো কিংবদন্তি। যাদের চরিত্রগুলি শত শত বছর আগে খুঁজে পাওয়া যায়।
আমু নওরোজকে সান্তা ক্লজের একটি সংস্করণ হিসেবে ভাবা হয়। আর হাজি ফিরোজকে কালো মুখ দিয়ে চিত্রিত করা হয়েছে। তারা শুভকামনা জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন।
সূত্র: তেহরান টাইমস।
আপনার মতামত লিখুন :