নাঈমুল হাসান তানযীম: বাংলা ভাষা। বিশ্বের বুকে একমাত্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃত, যে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে নিজ জাতি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যেদিন উর্দুকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে এবং মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে ফুঁসে উঠেছিল বাঙালি বীর জনতা।
সেদিন রফিক সালাম বরকতদের বুকের তাজা রক্তে সৃষ্টি হয়েছিল নতুন এক ইতিহাস। আমরা পেয়েছিলাম মাতৃভাষার মর্যাদা ও প্রাণ খুলে কথা বলার স্বাধিকার। তাদের এই সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়েই অবশেষে ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি (৪ ফাগুন, ১৩৬২ সাল) উর্দুর সাথে সাথে বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার।
পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনন্য ঘটনা। এমনকি বিশ্ব দরবারেও এ ভাষা বিশেষ মর্যাদায় বরিত। ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসঙ্ঘ। যার ফলে এখন প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ‘ভাষার জন্য আন্দোলন’ কিংবা ‘আন্দোলনের অন্যতম উপলক্ষ ভাষা’, এমনভাবে অধিকার আদায়ের আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষী মানুষের এ আন্দোলন ও সংগ্রাম বিশেষভাবে স্মরণীয়।
ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট এথনোলগের ২০২০ সালের ২২তম সংস্করণের পরিসংখ্যান আমাদের জানাচ্ছে, পৃথিবীজুড়ে মোট বাংলাভাষীদের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখের (ভাষা-গবেষকদের ধারণা হিসাবে ২৮ কোটি হবে) কিছু বেশি। ক্রমিক বিচারে এর অবস্থান সারা বিশ্বের ভাষাগুলোর মধ্যে পঞ্চম।
একজন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ হিসেবে আমি গর্বিত। কারণ এমনি এমনিই আমি এ ভাষা পাইনি। এর জন্য করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম। বিলিয়ে দিতে হয়েছে নিজেদের জীবনও। এখন আমরা মনের সুখে কথা বলতে পারি। নিজ ভাষায় নিজের মতো করতে পারি ভাববিনিময়। কিন্তু একসময় তো সেটি সম্ভব ছিল না শত চাওয়া সত্ত্বেও। বাঙালি বীরেরা এ অধিকার অবশেষে ছিনিয়ে এনেছিল নিজেদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে। আমরা আজ তাঁদের স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
এনএইচটি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :