শহীদুল ইসলাম: বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত অমর একুশে বই মেলা গতাকাল শেষ হয়েছে। করোনা মহামারীর আগের দুই বছর সংক্ষিপ্ত বইমেলা। এর পরে ২০২৩ সালের বই মেলায় পাঠক, দর্শক, প্রকাশক সবাই ফিরেছিলো প্রাণের স্পন্দনে। এবারের মেলায় শুরুর দিকে দর্শনার্থীর তুলনায় বই বিক্রয় কম হলেও শেষ দিকে এসে চিত্র পাল্টে যায় মেলা প্রঙ্গণের। স্টলগুলোতে দেখা যায় তালিকা হাতে পাঠকদের বই কেনার দৃশ্য। শেষ দিকের বই বিক্রিতে এবার অনেক প্রকাশনী সন্তুষ্ট।
বাঙ্গালীর প্রাণের মিলনমেলা অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২৩। শেষ সময় মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায় বই বিক্রির ধুম, মেলায় যারা এসেছেন তার সিংহভাগই ক্রেতা। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এর মধ্যে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংকট। সবকিছুর ছাপ যেন এবারে পড়েছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়। মেলার শেষ হওয়ার আগে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা মেলে ক্রেতাদের বেশ আগ্রহের সাথে বই কেনার দৃশ্যে। শিশু থেকে তরুণ, তরুণ থেকে বয়স্ক, সকল শ্রেণী পেশার মানুষের দেখা মেলে মেলার স্টলগুলোতে। প্রকাশকরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গতবারের চেয়ে এবারের বই মেলায় ৩০-৪০ শতাংশ বই কম বিক্রি হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় থাকলেও তাদের অধিকাংশই বই না কিনে ঘুরতে এসেছেন। সালাউদ্দিন বইঘরে গেলে তারা বলেন, এবারের মেলায় নারী ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি। মেলায় মূলত তরুণদের বই তরুণরাই বেশি কিনছে, আগের লেখকদের বই বেশি কিনছেন সিনিয়ররা। এবারের মেলায় ৪৭০ টি বইয়ের স্টলে ৩৩০৭ টি নতুন বই এসেছে।
বই মেলায় প্রতিবছর বই কিনতে আসা মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্রনাথ কলেজের লেকচারার সিনথিহা সাবরীণার সাথে জলধি প্রকাশনীতে দেখা হয়। সাবরীণা বই মেলায় ঢুকেই তার বাচ্চার জন্য জলধি প্রকাশনী থেকে নাজমুল হাসানের লেখা শিশু-কিশোরদের আবৃত্তির শিক্ষা বইটি কিনেন।
সিনথিহা সাবরীণ বলেন, সারা মাস অপেক্ষার পর কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে নিজের জন্য ও বাচ্চার জন্য গল্পের বই কিনতে এসেছি। বই মেলাতে সেই ২০০৬ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা অবস্থায় বন্ধুদের সাথে সাভার থেকে বই কিনতে মেলায় কয়েকবার আসতাম, এখনতো সাংসারিক ব্যস্ততা। তাই প্রতিবছর একবারের বেশি মেলায় আসা হয়না।
এদিকে বই মেলায় জীবনে প্রথম আসা নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি প্রথম মেলায় আসার অনুভূতি জানান। জান্নাত বলেন, আজ জীবনের প্রথম বইমেলায় আসলাম, এমন একটা মুহুর্ত সত্যি অনেক ভালো লাগছে। আসলে আমার একাডেমিক পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য বই পড়া হয়না, এজন্য আজকে বই মেলায় আসা। প্রকৃত অর্থে আমাদের একডেমির বাইরে অন্য বইও পড়াশোনা করা উচিৎ, বাহিরের অনেক কিছু জানা দরকার। নয়তবা লাইফে একগুয়েমি ভাব চলে আসে। জান্নাত বলেন, এর আগে কুমিল্লায় পড়াশোনা করেছি। বাবা কলেজে একটা বাইন্ডিংস এর মধ্যে রাখতেন, একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে অন্য বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেনা না, বলতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অন্য বই পড়বা। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ বন্ধু মিলে একসাথে মেলায় এসেছি, আজ অনেক আনন্দ করবো,পরে অনেকগুলো বই কেনবো।
আজ বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’ এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এসআই/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :