শাহীন খন্দকার: প্রকৃতিতে বইছে ফালগুনী ঋতুরাজ বসন্ত। আজ পহেলা ফালগুন, দখিনা দুয়ার খুলে দিয়েছে। দখিনা সমীরণের শিহরণ, জাগানো মাতাল হাওয়ায় কুসুম বনের কাপঁনে উড়ছে প্রজাপতি। বৃক্ষের ডালে ডালে কচিপাতা জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুডাক জানান দিচ্ছে, আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
ঋতুরাজের আগমনী রঙে রাঙা শুধু প্রকৃতিই নয়, সেই রঙ লেগেছে কিশোর-কিশোরী সবার মনে। তার ওপর একই দিনে ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফালগুন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে বসন্ত উৎসবে ১৪২৯ উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগ বটতলা ফুল ব্যবসায়ীরা দেশী বিদেশী ফুল আমদানী করেছেন প্রতি বছরের ন্যয় চলতি বছরেও।
রাজধানীতে আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বসন্তে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি, ব্যবসায়িদের দাবি মাতৃভাষা দিবসে ফুল বিক্রির লক্ষ ৩০ কোটি টাকা। শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমেদ জানালেন, এবার ফালগুনকে সামনে রেখে ফুল আমদানী হয়েছে, প্রায় অর্ধ কোটি টাকার।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত শাহবাগে ফুল বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার। তিনি আরো জানিয়েছেন, সারাদিনে আরো কয়েক কোটি বিক্রি হবে বলে আশাবাদি তিনি। এর পরেই আসছে ২১ ফেরুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস।
মাতৃভাষা দিবসে লক্ষ সারাদেশে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। বাজারে ফুলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখতে প্রস্তুত রয়েছে ব্যবসায়িরা বলে ও জানালেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক বলেন, বরাবরের মতোই এবছর ফুলের ফলন ভালো হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ফুল সরবরাহ ও হচ্ছে। ফুলের দাম এবং বিক্রির পরিমাণের বিষয়ে বলেন, চলতি বছর ফুলের দামটা একটু বেশি।
প্রতি পিস আগের চেয়ে ৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আছে। গত দু’দিনে দোকান প্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছে। আবারে কোন দোকান ২০-৮০ হাজার টাকাও বিক্রি করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশী ফুল এসেছে, বাংলাদেশের যশোরের গদখালী,গান্না, জীবন নগর, সাভার, আশুলিয়া,নবীনগর, গোলাপ নগর, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে।
এছাড়াও দেশের বাহিরে ভারতের দক্ষিণ কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালোর সিটি থেকে এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যসহ চীনের রাজধানী বেইজিংথেকেও এসেছে। ব্যাঙ্গালোর থেকে এসেছে গোলাপ আর লিলি, চায়না থেকে লিলি, গোলাপ, স্টোমার্ক, লিমু, জিপসি অরকিট ফুল ট্যাক্সসহ ফুল আমদানী হয়েছে প্রায় এককোটি টাকার ফুল।
শাহবাগের পাইকারি বিক্রেতা ফ্লাওয়ার গার্ডেনের মো. জেনারুল শেখ বলেন, এ বছর বাজারটা ভালো যাবে। তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা ইতোমধ্যে মাতৃভাষা দিবসের ফুল অর্ডার আগেভাগেই দিয়ে রাখছে। ওয়াহিদা পুষ্পালয়ের স্বত্বাধিকারী শেখ কাউসার বলেন, এবার আমরা অনেক আশাবাদী।
তিনি বলেন, গত বছর এই সময়টাতে দিনে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করছি। তবে এবার বিক্রির পরিমাণ দৈনিক ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা যাবে। বাজার বেশ ভালো যাচ্ছে। শ্যামলী ফুলবাজারের মালিকরা জানিয়েছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ফালগুন, দুই দিবসে ফুলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে তাদের। বরাবরের মতো এ বছরেও ফুলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ফুল সরবরাহ আছে বাজারে।
পাইকারি ফুল বিক্রেতা মো. জেনারুল শেখ বলেন, ফুলের দাম এবং বিক্রি সর্ম্পকে বলেন, চলতি বছর ফুলের দামটা একটু বেশি। প্রতি পিস আগের চেয়ে ৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আছে। তবে এ বছর বোঝা যাচ্ছে বাজারটা ভালো যাবে।
খুচরা বিক্রেতারাও ইতোমধ্যে ফুল ভালো বিক্রি করছে। একটি গোলাপের দাম নিচ্ছে ৪০-৭০ টাকা আর একপিচ লিলি নিচ্ছে ৫০০ টাকা, রজনীগন্ধা নিচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। আগারগাঁও ফুল ব্যবসায়ি জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার পর থেকে ফুল রপ্তানি কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ফুলের চাহিদা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক রয়েছে এবং রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ছে। আগে দেশে টিউলিপ উৎপাদন হতো না,এখন টিউলিপও উৎপাদন হচ্ছে। লিলিয়াম ও অর্কিডের উৎপাদন বাড়ছে। এই টিউলিপ রপ্তানির চিন্তা আমাদের রয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মতো ফুল সরবরাহের সুযোগ বৃদ্ধি করা গেলে এই খাত থেকে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ফালগুনকে সামনে রেখে গত তিনদিন ধরে গোলাপফুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০ পিচ ফুল ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়।
রজনীগন্ধা এক হাজার থেকে ১৫ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লিলি ফুল এক স্টিকের দাম ৪০০ টাকা, একটি গাদামালার লহর ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাদাফুলের মালা ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারি। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে যশোরের গদখালি ও সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে মাতৃভাষা ২১ ফের্রুয়ারীতে। জসিম উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেতো। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় এবং আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে।
এর মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, পামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে।কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোয় ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় অতি মুনাফার লোভে বেশি দামে ফুল বিক্রি করেন বিক্রেতারা।
মঙ্গলবার শাহবাগের পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দোকানে তুলেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের স্থায়ী ও ভাসমান ফুল ব্যবসায়ীরা শাহবাগের ফুলের দোকান থেকে ফুল নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ফুল কিনতে চলে এসেছেন। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মান ভেদে একটি গোলাপ ৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১৫-২০ টাকা, রজনীগন্ধা ৬-৮ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
এছাড়া খুচরা বাজারে একই ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, একটি গোলাপ ২৫ থেকে ৪০ টাকা, আর একটু বড় সাইজের গোলাপ ৫০-৮০ টাকা, জারবেরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস ২০-৩৫ টাকা ও রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১০-২০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আর গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা দরে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০-২ হাজার টাকায়, অন্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি। পথোশিশুরা গোলাপফুল বিক্রি করছে প্রতিপিচ ২০-৩০ টাকায় আর রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি করছে ১০-১৫ টাকায়।
এসকে/এএ
আপনার মতামত লিখুন :