রাশিদ রিয়াজ : ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গতকাল পুরানো ফারসি এবং আরবি শিলালিপি ও পান্ডুলিপির পাঠোদ্ধার বিষয়ক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালাটি পরিচালনা করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার মর্তোজা রেজওয়ানফার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, আরবি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে সম্মানিত শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের তিনজন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন ফারসি গবেষকও এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালাটি ফারসি ভাষায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি অনুবাদের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তা তানজিনা বিনতে নূর। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের চলচ্চিত্র ও জনসংযোগ বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
কর্মশালাটি মূলত তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিলো। প্রথম পর্বে জনাব রেজভানফার ফারসি শিলালিপির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে সকলকে ধারণা দেন এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাপ্ত ফারসি শিলালিপিগুলোর ছবি ও পরিচিতি তুলে ধরেন। কর্মশালার দ্বিতীয় অংশে ফারসি লিপিশৈলী সম্পর্কে তথ্যবহুল আলোচনা তুলে ধরেন। তৃতীয় ও শেষ পর্বে একটি প্রশ্নোত্তর সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মর্তোজা রেজওয়ানফার।
যেকোন সভ্যতা বা সংস্কৃতির মূল পর্যন্ত জানার অন্যতম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সেখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক শিলালিপি ও পাণ্ডুলিপি। আর ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সভ্যতা হচ্ছে পারস্য সভ্যতা যার বিভিন্ন শিলালিপি ও পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। পুরানো ফারসি এবং আরবি শিলালিপি ও পান্ডুলিপির পাঠোদ্ধার বিষয়ক এই ওয়ার্কশপটিতে জনাব রেজভানফার ফারসি বর্ণমালা, পৃথিবীর কোথায় ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি অধিক জনপ্রিয় ও প্রচলিত ছিল এবং কেন বা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, ফারসি আর আরবি ভাষার শিলালিপির মধ্যে পার্থক্য, বাংলাদেশে ফারসি ভাষার ব্যাপকতা, ফারসি ভাষার বিভিন্ন ধরনের লিপিশৈলী সম্পর্কে আলোচনা করেন। পাশাপাশি ইরানি সংস্কৃতির সাথে বাংলাদেশের মিল, শিলালিপির পাঠ থেকে নির্মাণ সাল নির্ণয়ের কৌশল, বাংলাদেশে প্রাপ্ত ফারসি বা আরবি শিলালিপিগুলো লেখার ধরন, বিভিন্ন নকশার মাধ্যমে ফারসি লিপির আকর্ষণীয় নকশা তৈরির কৌশল ইত্যাদি অত্যন্ত সহজ ভাষায় তথ্যবহুল আলোচনা উপস্থাপন করেন। আরবি বা ফারসি ভাষা না জানা থাকলেও শিলালিপি বা পান্ডুলিপিটি কোন ভাষায় লেখা তা সহজে নির্ণয় করার কৌশলগুলো উপস্থিত দর্শকদের জন্য সহজভাবে ব্যাখ্যা করেন। কর্মশালাটি উপস্থিত অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ফারসি ভাষা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ললিতা মন্ডল বলেন, “এই ওয়ার্কশপের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের শিলালিপিগুলোর লেখার ধরন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এছাড়া ফারসি লিপিগুলোর যে বিভিন্ন ধরন রয়েছে তার সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। আর ওয়ার্কশপটি এত সহজ ও সুন্দরভাবে নেওয়া হয়েছে যে আমার মতো যারা আরবি ও ফারসি ভাষার কিছুই জানে না তাদের কাছেও আলোচ্য বিষয়টি জটিল মনে হয়নি। শিক্ষকদের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।” অপর এক শিক্ষার্থী ফারজানা পারভিন বলেন, “আজকের কর্মশালা ফারসি ভাষা শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।” অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই এই সুন্দর আয়োজনের জন্য ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো কর্মশালায় অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :