বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল শুক্রবার বিকালে মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের তার পদত্যাগেরে বিষয়টি উল্লেখ করেন। সঙ্গে অভিযোগের আঙুল তোলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দিকে।
সৈয়দ জামিল আহমেদের কথায়, ‘কোনোরকম চিঠি ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাকে টাকা দিতে হবে! কারণ তার খুব দরকার। তিনি একটা প্রজেক্ট করছেন। সেই প্রজেক্টে আমি বলছি “না”। তিনি এখানে টাকা পয়সা কোনো উলটাপালটা হোক, কিন্তু আমাকে কোনো চিঠি ছাড়া, কোনো চিঠি ছাড়া কেমন করে তিনি চান টাকা; যখন উপদেষ্টা! এবং আমি যখন বলেছি- না, আমাকে চিঠি দেন। চিঠি ছাড়া অবশ্যই আমি টাকা দেব না তাকে। আমি কোনো টাকা এখানে ছাড় করব না। তিনি তখন আমাকে বলেন, ‘আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক! আর করব না!”’
অবশেষে সৈয়দ জামিল আহমেদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুললেন ফারুকী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেন- সৈয়দ জামিল আহমেদের অভিযোগের সবকিছু সত্য নয়, কিছু বিষয় সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর কিছু তার ব্যক্তিগত হতাশা থেকে আসা।’
ফারুকীর কথায়, ‘সৈয়দ জামিল আহমেদের কাজের একজন গুণমুগ্ধ আমি। সম্ভবত উনার কাজ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো পত্রিকায় ছাপা হওয়া সবচেয়ে বিস্তারিত লেখাটা আমি লিখেছিলাম যায়যায়দিনের এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাগাজিন মৌচাকে ঢিলের জন্য। এর পরেও বাংলা-ইংরেজি অনেক কাগজে লিখেছি। এখনও আমি তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের সবচেয়ে মেধাবী নির্দেশক মনে করি। কয়দিন আগেও জামিল আহমেদের সামনেই একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেছি উনাকে দিয়ে তাদের দেশে একটা থিয়েটার প্রোডাকশন করাতে।’
ফারুকী আরও বলেন, ‘কিন্তু ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো দুইটা দুইরকম আর্ট। দ্বিতীয় কাজটা করবার জন্য লাগে ধৈর্য এবং ম্যানেজারিয়াল ক্যাপাসিটি। কলিগদের বুলিং না করে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে যে কম্পোজার লাগে, সেটার সাথে কোনো একটা থিয়েটার দলে নির্দেশনা দেওয়ার টেম্পারামেন্ট এক না। আমার ফিল্ম ইউনিটে আমি যা করতে পারি, একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি তা করতে পারি না।’
পদত্যাগ বিষয়ে ফারুকীর ভাষ্য, ‘আমি জামিল ভাইয়ের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না, কারণ তাতে আমাকে এমন কিছু রেফারেন্স টানতে হবে যেটা তার জন্য অস্বস্তিকর হবে। আমি চাচ্ছিলাম না কারণ আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ফর রেকর্ডস আমাকে আসলে এগুলো বলতেই হবে। আজকে আমাদের অনেকগুলা কাজ আছে। এটা শেষ করে সময় পেলে লিখব।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু এইটুকু আপাতত বলে রাখি, উনার বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা, এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারার হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে। আমার বিস্তারিত লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।’