শাহীন খন্দকার: [২] নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর চিরচেনা চিত্র হলো বাড়ির পেছনে বা আঙিনায়, পাহাড়ী টিলায় কিংবা বনজঙ্গলে বাঁশ ঝাড়, গাবগাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠছে বেতগাছ। যা এখন বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাচ্ছে বেতগাছ আর বেতফল।
[৩] দূর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ডাহাপাড়া গ্রামের আদিবাসী কবিলা রুংদী বলেন, বেতগাছে ফুল আসে আশি^ন-কার্তিক মাসে, আর ফল পাকে চৈত্র, বৈশাখ বা জ্যৈষ্ঠ মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও গারো-হাজং অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ওষুধিগুণ সমৃদ্ধ।
[৪] কবীলা রুংদী বলেন, মাটির অবস্থা ভেদে এ ফল খুব মিষ্টি, আবার একটু টকও হয়। বেতফল মরিচ ও কাসুন্দি দিয়ে জামের মতো ঝেঁকে খেতে খুব মজা। পাকা বেতফল এমনিতেই খেতে দারুণ স্বাদ। ফল আসার সময় সবুজ রং ধারণ করে। পাক ধরে আস্তে আস্তে সাদা বিশেষ রং ধারণ করে। বেতের কচিসাস অংশ ভর্তা করেও খাওয়া যায়। আদিবাসীদের বিশ্বাস গরম ভাতের সাথে কচি অংশ ভর্তা করে খেলে গুরাকৃমি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
[৫] কবিলা রুংদী বলেন, গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারী পুরুষেরা বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরী করেন, যেমন- মোড়া, ডালা, কুলা, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, চাল মাপার শের , পাতি, দোলনা এবং বাজারের ঝুড়ি ইত্যাদি। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানান কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ নিজ প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড় কমিয়ে ফেলেছেন। কয়েক বছর আগেও হাজং-গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা বেত সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতেন। যা আজ নেই বললেই চলে।
[৬] বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির বেতফল পাওয়া যায়। এসবের কাণ্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে একধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি এই রস খেতে বেত গাছে ভিড় জমায়। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :