নিউজ ডেস্ক: দেশটির রাজধানী স্টকহোমে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বসহ সমগ্র বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, জর্ডান, কুয়েত, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশগুলোও। ডেইলি সাবাহ

এর আগে গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে একদল উগ্র ডানপন্থির বিক্ষোভকালে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে।

এদিন উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের বিতর্কিত নেতা রাসমুস পালুদান পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে কোরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগে প্রায় এক ঘণ্টা ইসলাম ধর্ম ও সুইডেনের অভিবাসন ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে গালিগালাজপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তিনি। এ সময় তার পাশে প্রায় ১০০ জন সমর্থক ছিল।

কোরআন পোড়ানোর পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেয় তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলায় তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এমন ইসলামবিরোধী কাজের অনুমতি দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি মুসলিমদের নিশানা এবং আমাদের পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননা করে।’

দেশটির রাজধানী আঙ্কারা থেকে জানানো হয়েছে, কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে তারা সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি আসন্ন সফর বাতিল করেছে। ওই সফরে সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। পুরোনো সব সদস্যের সমর্থন ছাড়া এ পশ্চিমা সামরিক জোটে কেউ নতুন সদস্য হতে পারে না। তাই সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে হলে অবশ্যই তুরস্কের সম্মতি আদায় করতে হবে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আসুন আমরা ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যখ্যান করে সারাবিশ্বে সহনশীলতা এবং সম্প্রতির বার্তা ছড়িয়ে দিই।
 
জর্দান সতর্ক করে বলেছে, পবিত্র কুরআন পোড়ানোর এই ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক তৎপরতাকে উসকে দেবে। এ জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শান্তি ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে হবে। চরমপন্থার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোকে সম্মিলিত দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছে দেশটি।

কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, কুরআন পোড়ানোর এ ঘটনা সারাবিশ্বের মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মিসর কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ ঘটনা মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। এ সম্পর্কে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মিসর আরো বলেছে, এমন ন্যক্কারজনক কাজ বাদ দিয়ে বরং সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধকে উচ্চে তুলে ধরতে হবে।  

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারও পবিত্র কুরআন পোড়ানোর  নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। পবিত্র কুরআন পোড়ানোর অনুমতি দেওয়ায় কাতার সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিন্দা করেছে। বিদ্বেষ ও সহিংসতা প্রত্যাখ্যানের দায়িত্ব পালন করতে দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রোববার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে সারাবিশ্বের মুসলিমদের পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননার ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক টুইটে বলেন, ‘সুইডেনে পবিত্র কোরআন অবমাননার মতো জঘন্য কাজের নিন্দা জানাতে কোনো শব্দই যথেষ্ট নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করা যায় না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ রিপোর্ট: নাহিদ হাসান

এনএইচ/এসএ