জুমার দিন মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। ইসলামে জুমার দিন সপ্তাহের সেরা হিসেবে বিবেচিত। নবী করিম (সা.) বলেন, পৃথিবীতে যত দিন সূর্য উদিত হবে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন। (সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৪)। অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত হলো জুমার দিন। (সুনানে ইবনে মাজা: ১০৮৪)। পূর্বের কোনো নবীর উম্মত জুমার দিন পায়নি। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে এই দিন বিশেষ উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
শ্রেষ্ঠতম এই দিনে মুমিনদের জন্য বেশ কিছু আমল রয়েছে; সুরা কাহাফ তিলাওয়াত এর মধ্যে অন্যতম। পবিত্র কোরআনের ১৮তম সুরা এটি, যা ১১০ আয়াত নিয়ে গঠিত। জুমার দিন এ সুরা তিলাওয়াতে অনেক ফজিলত রয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, জুমার দিন যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার (ইমানের) নুর এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি: ৫৯৯৬, মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৫)
আলী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিন যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সব ধরনের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয়, তবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নিরাপদ থাকবে। (হাদিসুজ জুহরি: ১২৭, আল-আহাদিসুল মুখতারাহ: ৪৩০)
আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ্ মুসলিম: ৮০৯)
আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে, সেভাবে তিলাওয়াত করবে, তার জন্য কিয়ামতের দিন সেটা নুর (আলো) হবে। (শুআবুল ইমান: ২২২১)
বারা ইবনে আজেব (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি কোনো এক রাতে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিল। তার পাশে দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঢেকে ফেলল। এরপর যখন সেই মেঘখণ্ড ধীরে ধীরে নিচে নামতে লাগল, তখন তার ঘোড়া ছোটাছুটি শুরু করল। পরদিন সকালে ওই ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে রাতের ঘটনা বর্ণনা করলেন। নবীজি (সা.) সব শুনে বললেন, ওইটি ছিল সাকিনা (রহমত), যা কোরআন তিলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। (সহিহ্ বুখারি: ৫০১১; সহিহ্ মুসলিম: ৭৯৫)
ইসলামবিষয়ক গবেষকদের মতে, বৃহস্পতিবার দিন শেষে সূর্য ডোবার পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করলে তা জুমার দিনে পড়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া এক বৈঠকে সুরা কাহাফ পুরোটা পাঠ করা আবশ্যক নয়। একাধিক বৈঠকে ভাগ ভাগ করে সুরাটি পড়ে শেষ করলেও একই সওয়াব পাওয়া যাবে। সূত্র: আজকের পত্রিকা