মানুষকে স্বেচ্ছাচারী জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে রক্ষা করতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তাঁর (আল্লাহ) নির্দেশনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিতদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের সৎ কৃতদাস ও কৃতদাসীদেরও। যদি তারা দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ তার নিজ অনুগ্রহে ধনী বানিয়ে দেবেন।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩২)
তবে কাদের বিয়ে করা যাবে, কাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না; এর একটি মৌলিক নীতি দিয়েছে ইসলাম। যে ১৫ শ্রেণির নারীকে বিয়ে করা হারাম, তাদের তালিকা এখানে দেওয়া হলো—
১. বাবার স্ত্রী—বাবা মারা গেলে বা তালাক দিলেও (বাবার স্ত্রী তথা সৎমাকে) বিয়ে করা ছেলের জন্য বৈধ নয়। জাহেলি যুগে এ ধরনের বিয়ে প্রচলিত ছিল, কিন্তু ইসলামে এই বিয়ে হারাম।
২. মা—তেমনিভাবে দাদি, নানি ও তাদের ওপরের সবাই।
৩. মেয়ে—নিজের মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে ও তাদের গর্ভজাত কন্যাসন্তান।
৪. বোন—সহোদর, বৈমাত্রেয় (সৎমায়ের মেয়ে) ও বৈপিত্রেয় (সৎবাবার মেয়ে) বোন।
৫. ফুফু— বাবার সহোদর বোন এবং বাবার বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন।
৬. যে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মিলন হয়েছে, তার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী স্বামীর ঔরসজাত কন্যাসন্তান, স্ত্রীর আপন মা, নানি শাশুড়ি ও দাদি শাশুড়ি।
৭. খালা—মায়ের সহোদর বোন এবং মায়ের বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন।
৮. ভাতিজি—সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কন্যাসন্তানেরা।
৯. ভাগ্নি—সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কন্যাসন্তানেরা।
১০. দুধ মেয়ে—(স্ত্রীর দুধ পান করেছে এমন), সেই মেয়ের মেয়ে, দুধ ছেলের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কোনো কন্যাসন্তান এবং দুধ ছেলের স্ত্রী।
১১. দুধ মা এবং তার দিকের খালা, ফুফু, নানি, দাদি ও তাদের ঊর্ধ্বতন নারীরা।
১২. দুধ বোন, দুধ বোনের মেয়ে, দুধ ভাইয়ের মেয়ে এবং তাদের গর্ভজাত যেকোনো কন্যাসন্তান। অর্থাৎ দুধ সম্পর্ককে রক্তসম্পর্কের মতোই গণ্য করতে হবে।
১৩. ছেলের স্ত্রী।
১৪. এমন দুই নারীকে একসঙ্গে স্ত্রী হিসেবে রাখা যাবে না, যাদের একজন পুরুষ হলে তাদের মধ্যে বিয়ে বৈধ হতো না। যেমন—স্ত্রীর বোন, খালা, ফুফু।
১৫. বিবাহিতা নারী—অন্যের বিবাহের অধীনে থাকা নারীর সঙ্গে কারো বিয়ে বৈধ নয়। অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত লাগবে—১. স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া। ২. মৃত্যু বা তালাক-পরবর্তী নারীর ইদ্দত পূর্ণ হওয়া।
কোরআনের প্রমাণ: ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মায়েরা, কন্যারা, বোনেরা, পিতার বোনেরা, মাতার বোনেরা, ভাইয়ের কন্যারা, বোনের কন্যারা, যেসব মায়েরা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন, দুধ বোনেরা, তোমাদের স্ত্রীদের মায়েরা, তোমাদের ঔরসজাত স্ত্রীর কোলে লালিত কন্যারা, ... এবং দুই বোনকে একসঙ্গে বিবাহ করা।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩) উৎস: নিউজ২৪