শিরোনাম
◈ পৃথিবীর প্রথম স্থায়ী সাগরতল গবেষণাগার নির্মাণ করছে চীন ◈ এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, কমেছে তেলের দাম ◈ মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা ◈ সাঈদী-মুজাহিদের কবর জিয়ারতের পথে জামায়াতের বাস দুর্ঘটনা, নিহত ৩ ◈ থাইল্যান্ডে ও‌পেন সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পর এবার রৌপ‌্য পদক জিত‌লেন বাংলাদেশের রাফি ◈ ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে একজোট হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো ◈ ম্যানচেস্টার ইউনাই‌টে‌ডের বিরু‌দ্ধে ড্র কর‌লো ম‌্যান‌চেস্টার সি‌টি  ◈ রাজবাড়ীর সাবেক এমপি কাজী কেরামত আলী ঢাকায় গ্রেপ্তার ◈ আধুনিক ‘ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ে’ চালুর উদ্যোগ ◈ ট্রাম্প ও ইলন মাস্কবিরোধী বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যে

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:২০ দুপুর
আপডেট : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জান্নাত মেলে মেহমানের সমাদরে 

মেহমানের সমাদর করা মুমিনের ভূষণ। মুমিন মেহমানের আগমণে খুশি হয়। মেহমানকে সাদরে গ্রহণ করে। কেননা কেননা নবীজি (সা.) মেহমানকে সম্মান করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। নিম্নে মেহমানের আপ্যায়নের গুরুত্ব ও আদব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। 

মেহমান আপ্যায়নের গুরুত্ব : ইসলামে মেহমানের আপ্যায়নের গুরুত্ব অপরীসীম। এটি কেবল সামাজিকতা নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় করলে এক ধরনের ইবাদতও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, অতিথিকে সমাদর করে, আর ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)
এই হাদিসে মেহমানের সমাদরকে ঈমানের দাবি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যে ঈমান রাখে, তার উচিত, মেহমানকে সম্মান করা। তার আগমনে বিরক্ত না হওয়া। 

মেহমানের হক: প্রতিটি মুসলমানের ওপর তার কাছে আগত মেহমানের হক রয়েছে। তাইতো নবীজি (সা.) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-কে লাগাতার রোজা রাখতে অনুত্সাহি করার সময় বলেন, কয়েকদিন রোজা পালন কর, আর কয়েকদিন ইফতার কর (রোজা ভঙ্গ কর)। তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে। তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার মেহমানের হক আছে, আর তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। নিশ্চয়ই তুমি তোমার আয়ু দীর্ঘ হবার আশা কর।  (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৪)

আপ্যায়নের সময় সীমা : বাড়িতে কোনো মেহমান এলে মেজবানের দায়িত্ব তার মেহমানদারি করা, মেহমানের হক আদায় করা। প্রশ্ন হলো, এর কি কোনো সময়সীমা আছে নাকি মেহমান যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবে, মেজবান সামর্থ না থাকলেও তার মেহমানদারি করে যাবে? এর উত্তরও পবিত্র হাদিসেই রয়েছে।

আবু কারীম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একরাত মেহমানদারী করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। যার আঙ্গিনায় মেহমান নামে, একদিন মেহমানদারী করা তার উপর ঋণ পরিশোধের সমান। সে ইচ্ছা করলে তার ঋণ পরিশোধ করবে বা ত্যাগ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৫০)

তবে তিনদিন পর্যন্ত মেহমানদারি করা সুন্নত। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু শুরাইহ খুযাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মেহমানদারী তিন দিন এবং উত্তমরূপে মেহমানদারী একদিন ও একরাত্রি। কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাই-এর নিকট অবস্থান করে তাকে পাপে নিপতিত করবে। তখন সাহাবাগন বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কিভাবে সে তাকে পাপে নিপতিত করবে? তিনি বললেন, সে (মেহমান) তার নিকট (এমন বেশী দিন) থাকবে, অথচ তার (মেজবানের) এমন সম্বল নেই যা দ্বারা সে তার মেহমেনদারী করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০৬)

মেহমানদারির ফজিলত
সম্মানজনক জীবন লাভ : কিছু গুণ এমন আছে, যেগুলো কারো মধ্যে থাকলে মহান আল্লাহ তাকে সর্বাবস্থায় সাহায্য  করেন, সম্মানিত করেন। তিনি কোথাও তাকে অপমানিত হতে দেন না। যেমন খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোঁজ-খবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, মেহমানের সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৩)

জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম : আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সাধ্য মতো মেহমানের আপ্যায়ন করা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হতে পারে। হাদিস শরীফে জান্নাতে যাওয়ার যে আমলগুলো বাতলে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো, মানুষকে খাওয়ানো। নবীজি (সা.) মদিনায় পৌঁছে সর্বপ্রথম যে নসিহত করেছেন। তা ছিল— ‘হে মানুষগণ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান কর এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় কর। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহীহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫)

জান্নাতে প্রাসাদ লাভ : যেসব অভ্যাসে জান্নাতে বিশেষ প্রাসাদ পাওয়া যাবে, তার মধ্যে একটি কাজ হলো, মেহমানদারি করা, মানুষকে খাওয়ানো। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা (প্রাসাদ) আছে। এর ভিতর হতে বাইরের এবং বাহির হতে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বিদুঈন (গ্রাম্যলোক) দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ! এই বালাখানা কোন ব্যক্তির জন্য? তিনি বলেন, যে লোক মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়, সর্বদা রোজা পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে তার জন্য। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৪)

আল্লাহর সন্তুষ্টি : মেহমানদারির দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। নবীজি (সা.)-এর যুগে এক আনসারি দম্পতি নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও মেহমানের সমাদর করেছিল, এতে মহান আল্লাহ এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি এ ব্যাপারে কোরআনের আয়াত নাজিল করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, এক লোক নবী (সা.)-এর খেদমতে এল। তিনি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কে আছ যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সঙ্গে খাওয়াতে পার? তখন এক আনসারি সাহাবি [আবু ত্বলহা (রা.)] বললেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারি বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরী ছিল তা উপস্থিত করল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গেলেন, তখন তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কান্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাজিল করেছেন। ‘তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কৃপণতা হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত। [সুরা হাশর, আয়াত : ৯]’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭৯৮)

আদব ও নিয়ম-কানুন
মেহমানকে স্বাগত জানানো : আল্লাহর রাসুল (সা.) আগত মেহমানদের স্বাগত জানাতেন। তাদের আগমণে আনন্দ প্রকাশ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬১৭৬)

আন্তরিকতা প্রদর্শন করা : মেজবানের উচিত, নিজ হাতে তার মেহমানদের সেবা করা, আন্তরিক ভাবে তাদের হাসিমুখে গ্রহণ করা, তাদের আগমনে খুশি হয়, এমন কথা বলে যা তাদের মনকে আকৃষ্ট করে। আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমানদারির প্রসঙ্গে বলেন— ‘অতঃপর তিনি (খাবারটি) তাদের সামনে রেখে  বললেন, ‘তোমরা কি খাচ্ছ না?’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ২৭০

অন্তত তিনদিন পর্যন্ত মেহমানদারি করা : তিন দিন পর্যন্ত মেহমানের আপ্যায়ন করা সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০৬)
অতিথির জন্য বাড়তি চাপ নেওয়া নিষেধ: কেননা রাসুল (সা.) মেহমানদারি করতে গিয়ে সাধ্যের বাইরে গিয়ে অহেতুক খরচ করে আপ্যায়নের কৃত্রিমতা প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, যে, এক ব্যক্তি তাঁর কাছে প্রবেশ করল (মেহমান হলো), তখন তিনি (সালমান) যা তাঁর কাছে ছিল তা দিয়ে তার আপ্যায়ন করলেন। তারপর বললেন— ‘যদি না রাসুল (সা.) আমাদেরকে নিষেধ করতেন, (অথবা বলেছেন) যদি না আমাদের নিষেধ করা হতো, যে আমাদের কেউ যেন তার সাথীর জন্য কষ্ট স্বীকার না করে, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার জন্য কষ্ট স্বীকার করতাম (অর্থাত্ মেহমানদারিতে অহেতুক খরচ করতাম)। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩৭৭৪)

হাফেজ ইবন রজব (রহ.) জামি‘উল উলুম ওয়াল হিকাম-এ বলেছেন— ‘এটি এ বিষয়ে প্রমাণ যে, মেহমানকে আতিথেয়তা দেওয়ার দায়িত্ব কেবল তখনই বাধ্যতামূলক যখন কারো কাছে কিছু অতিরিক্ত থাকে। যদি তার কাছে অতিরিক্ত কিছু না থাকে, তাহলে তার ওপর কিছুই আবশ্যক নয়। আর কেউ যদি নিজেকে অগ্রাহ্য করে (অর্থাত্ নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও) অন্যকে প্রাধান্য দেয়, যেমন সেই আনসারি সাহাবি করেছিলেন যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ নাজিল করেছেন—তাহলে সেটা উত্তম মর্যাদা ও ইহসানের স্তরে পড়ে, কিন্তু তা ফরজ নয়।’

নিজ হাতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা : সাহাবায়ে কেরাম মেহমানকে নিজ হাতে আপ্যায়ন করতেন। খাবার পরিবেশন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৮৩)

খাবার পরিবেশনে বয়োজৈষ্ঠ্যদের প্রাধান্য দেওয়া : খাবার পরিবেশনের সময় তুলনামূলক বয়স্কদের প্রাধান্য দেওয়া এর পরপর ডান দিক থেকে পরিবেশন করাও সুন্নত। কারণ, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো কওমকে পান করাতেন, তখন বলতেন: ‘বড় থেকে শুরু করো।’ (মুসনদে আবি ইয়া‘লা)

মেহমানকে এগিয়ে দেওয়া: বিদায়ের সময় মেহমানকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়াও মেহমানদারির গুরুত্বপূর্ণ আদব। (ফাতহুল বারি : ৯/৫২৮)

মেহমানের আদব
আবুল লায়স সামরকন্দী বলেন, মেহমানের ওপর চারটি বিষয় রয়েছে—
প্রথমত: তাকে যেখানে বসানো হয়, সেখানেই বসবে।
দ্বিতীয়ত: মেজবান যা কিছু দেয়, তাতে সে সন্তুষ্ট থাকবে।
তৃতীয়ত: মেজবানের অনুমতি ছাড়া সে উঠবে না।
চতুর্থত: বিদায়ের সময় সে মেজবানের জন্য দোয়া করবে।
কোরআন হাদিসে মেহমানের পালনীয় আরো কিছু আদব পাওয়া যায়
খাবার শেষ হলে সেখানে আর দেরি না করা। (সুরা আহযাব, আয়াত : ৫৩)
দাওয়াতের বাইরে অতিরিক্ত কোনো মেহমান সঙ্গে এলে মেজবানের অনুমতি নেওয়া। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩৪) উৎস: নিউজ২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়