আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমের বিভিন্ন স্থানে চাঁদের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র একটি হিসাবের মধ্যে আবদ্ধ আছে।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ৫) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘তা মানুষের ও হজের জন্য সময় নির্ধারক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৯)
প্রত্যেক এলাকার মুসলমানদের ওপর আরবি মাসের হিসেব রাখা এবং মাসের শুরুতে চাঁদ দেখা ফরজে কেফায়া। কিছু লোক যদি দেখে নেয় তাহলে সবাই দায়িত্বমুক্ত হবে। অন্যথায় কেউ না দেখলে সবাই গুনাহগার হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও দেখার প্রতি উত্সাহিত করতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাসের নতুন চাঁদ দেখে এ দোয়া পড়তেন—‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমান ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম ওয়াত্তাওফীকু লিমা ইউহিব্বু রব্বুনা ওয়া ইয়ারদ, রব্বুনা ওয়া রব্বুকাল্লাহ।’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৭২৯; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১) এছাড়াও বিভিন্ন হাদিস শরিফে আরও কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় রাসুলুল্লাহ (সা.) চাঁদ দেখার বিষয়টিকে কতোটা গুরুত্ব দিতেন।
যে পদ্ধতিতে চাঁদ প্রমাণিত হয়: আকাশ আচ্ছন্ন থাকলে রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার জন্য চাঁদের খবর প্রদানকারী একজন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন বালেগ, ইসলামী শরিয়তের অনুশাসন মান্যকারী নির্ভরযোগ্য মুসলমান হতে হবে।
এক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার একই হুকুম। ঈদের চাঁদ দেখার জন্যও অনুরূপ গুণসম্পন্ন দুজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা হতে হবে। (আলবিনায়া ৪/২৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৭)
আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে রমজান ও ঈদের চাঁদ দেখার শরয়ী বিধান হলো, এত সংখ্যক লোক চাঁদের সাক্ষ্য দেয়া জরুরি, যার দ্বারা শরয়ি কাজী বা অভিজ্ঞ মুফতিগণের সমন্বয়ে গঠিত হেলাল কমিটির নিকট তা দৃঢ় বিশ্বাস্য হয়ে যায়। এর জন্য বিশেষ কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নেই। (হেদায়া ১/১১৯, আহকামুল কোরআন, জাস্সাস ১/২৮০)
মুসলিম সরকারকর্তৃক পরিচালিত চাঁদ দেখা কমিটি যদি অভিজ্ঞ মুফতি ও আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং উক্ত কমিটি শরীয়তের নীতিমালা অনুযায়ী ঘোষণা দিয়ে থাকে তাহলে তাদের ঘোষণা অনুপাতে সবার উপর আমল করা জরুরি, অন্যথায় আমল করা আবশ্যক হবে না। বরং এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্ভরযোগ্য মুফতিরা যদি ইসলামী শরিয়তসম্মত পন্থায় চাঁদ দেখার ঘোষণা দেন তাহলে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী স্ব স্ব এলাকার লোকেরা আমল করবে। তবে সকল মুসলিম এ বিষয়টি মাথায় রাখবে যে, এটি নিয়ে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। বিজ্ঞ মুফতিরাও চেষ্টা করবেন যেন জাতীয় হেলাল কমিটির মাধ্যমে সঠিক মাসআলা অনুসারে দেশের সকল মানুষকে একটি শরয়ি সিদ্ধান্তে একত্র করা যায়। তা নিয়ে এলাকাভিত্তিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি না হয়। (আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮৯; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৬৬; ফাতাওয়ায়ে উসমানি ২/১৬৭-১৬৮,১৭২)
দূরবীন ও টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ দেখা: শরীয়ত মানুষদেরকে কোনো ধরণের জটিল বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি ও যন্ত্রপাতির মারপ্যাঁচে না ফেলে সাধারণ চোখে চাঁদ দেখার উপর বিধানের ভিত্তি রেখেছে। কোনো কারণে ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা না গেলে বিচলিত না হয়ে মাস ৩০ দিন পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণে চাঁদ দেখার জন্য এতটুকু পন্থা অবলম্বন করবে যে এমন জায়গায় গিয়ে চাঁদ দেখার চেষ্টা করবে, যেখানে তার সামনে চন্দ্র উদয়ের স্থলে কোনো প্রতিবন্ধক না থাকে। ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট। তাই হেলিকপ্টারে উঠে চাঁদ দেখা অথবা দূরবীন ও টেলিস্কোপ ইত্যাদির সাহায্য নেওয়াকে ইসলাম নীতিগতভাবে পছন্দ করে না।
তবে যদি কেউ দূরবীন ও টেলিস্কোপ ইত্যাদির সাহায্যে স্বীয় এলাকার চন্দ্র উদয়স্থলে সঠিক সময়ে চাঁদ দেখে নেয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং এর দ্বারা চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হয়ে সকল বিধি-বিধান আরোপিত হয়ে যাবে। কেননা যেভাবেই হোক সে সঠিক সময়ে এবং সঠিক স্থলে চাঁদ দেখেছে, তা যেকোনো উপায় অবলম্বন করেই হোক না কেন। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১১৫)। উৎস: নিউজ২৪