জাকাত একটি আর্থিক ইবাদত। এটি আদায় করা ফরজ। পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত বন্দেগি আর দানখয়রাতের বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে বেশি বেশি পুণ্যকর্ম করে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়।
১. কারো ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ নয়। (মুয়াত্তা মালেক ১০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩)
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসয়ালাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়। ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে। ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেয়া হয়। খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশে যে ঋণ নেয়া হয়।
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে জাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে জাকাত ফরজ হবে, অন্যথায় নয়। কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে জাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে জাকাত কম দেয়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস ৭০৮৭)
২. বিয়ে-শাদিতে মোহরানার যে অংশ বাকি থাকে তা স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওনা। কিন্তু এই পাওনা স্বামীর ওপর জাকাত ফরজ হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ জাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাবের সময় এই ঋণ বাদ দেয়া যাবে না; বরং সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/২৬১)
উল্লেখ্য যে, বিনা প্রয়োজনে মোহরানা আদায়ে বিলম্ব করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
৩. অন্যকে যে টাকা কর্জ হিসেবে দেয়া হয়েছে বা ব্যবসায়ী কোনো পণ্য বাকিতে বিক্রয় করেছে এই পাওনা টাকা পৃথকভাবে বা অন্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে মিলিতভাবে নিসাব পূর্ণ করলে তারও জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস ৭১১১-৭১১৩,৭১২১,৭১২৩,৭১২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৬/৪৮৪-৪৮৬)
৪. পাওনা উসুল হওয়ার পর ওই টাকার জাকাত আদায় করা ফরজ হয়। তার আগে আদায় করা জরুরি নয়, তবে আদায় করলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস: ১০৩৪৭, ১০৩৫৬)
৫. উপরোক্ত ক্ষেত্রে পাওনা উসুল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের জাকাত আদায় করা ফরজ হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ৭১১৬,৭১২৯,৭১৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস: ১০৩৪৬, ১০৩৫৬)
৬. স্বামীর কাছে পাওনা মোহরানা নিসাব পরিমাণ হলেও তা স্ত্রীর হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাতে জাকাত ফরজ হয় না। হস্তগত হওয়ার পর যদি আগে থেকেই ঐ নারীর কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে এখন থেকে বছর গণনা শুরু হবে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর জাকাত আদায় করতে হবে।
৭. আর যদি স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার আগ থেকেই নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক থেকে থাকে তাহলে এই সদ্যঃপ্রাপ্ত মোহরানা অন্যান্য টাকা-পয়সা বা সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং সেই সব পুরানো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে।