আরবি বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস রমজান গুনাহ মাফ ও তাকওয়া অর্জনের মাস। মহান রাব্বুল আলামিন মুমিনদের জন্য এ মাসে অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের সুযোগ রেখেছেন। আবার এ মাসে অল্প আমলেই আছে অনেক বেশি ফজিলত। অন্যদিকে মহিমান্বিত এ মাসেই পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে।
পবিত্র এ মাসে রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- রমজান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শৃঙ্খলিত (শিকলবন্দি) করে দেয়া হয় শয়তানকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৭৮)
মহিমান্বিত এই মাস মূলত রোজা, কুরআন নাযিল ও লাইলাতুল কদর- এই ৩ কারণে অনন্য। আর এই তিনটি কাজেই বান্দার জন্য রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব।
রোজা রাখা: ফজিলতপূর্ণ এ মাসে রোজা রাখার মধ্যদিয়ে বান্দার গুনাহ মাফ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমজানের সিয়াম (রোজা) পালন করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রাত জাগরণ (ইবাদত) করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৫৪)
অন্যদিকে রমজান মাসের রোজা রাখার মধ্যদিয়ে পরকালে জান্নাত লাভেরও সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, এক মরুবাসী সাহাবী রাসুল (সা.) এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন- আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন, যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। জবাবে নবীজি তাকে বললেন- তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনোকিছু শরিক করবে না, (পাঁচ ওয়াক্ত) ফরজ সালাত (নামাজ) আদায় করবে, ফরজ যাকাত আদায় করবে ও রমজানের সাওম (রোজা) পালন করবে।
পরে ওই সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি (এর বেশি আমল) করব না। এরপর তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন রাসুল (সা.) বললেন- কেউ যদি জান্নাতি লোক দেখতে আগ্রহী হয়, সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩১৫)
কুরআন তেলাওয়াত: মহিমান্বিত এই মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে। তাই এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। খোদ রাসুল (সা.) ও এ মাস পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতে কাটাতেন।
অন্যদিকে রমজান মাসে পবিত্র কুরআন নাযিলের বিষয়ে সুরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা রাখে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
লাইলাতুল কদর : মহিমান্বিত রমজান মাসেই রয়েছে লাইলাতুল কদর বা ভাগ্যরজনী। এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (পবিত্র কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। (সুরা কদর, আয়াত: ১-৫)
পবিত্র রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যেকোনো একটি রাত শবে কদরের রাত। বিভিন্ন হাদিস ও আলেমদের মতে, রমজানের ২৭ তারিখে শবে কদর, যা মূলত ২৬তম রোজার দিন রাতে। তাই শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় বেশি বেশি ইবাদত করা উত্তম।
খোদ নবীজিও রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, যখন রমজানের শেষ দশক আসতো তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৭) উৎস: চ্যানেল২৪