ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আলোচিত ইসলামিক বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে এদেশের মাটি ও মানুষের সংস্কৃতি নয়। এই অপসংস্কৃতি বর্জন করুন। পবিত্র জীবন যাপন করুন।
ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে তিনি লেখেন, ধন-সম্পদ আর জ্ঞান-বিজ্ঞানে ওরা আমাদের চেয়ে এক শত বছর এগিয়ে থাকলেও সুখী দাম্পত্য এবং টেকসই পরিবার ব্যবস্থাপনায় আমরা ওদের চেয়ে দুই শত বছর এগিয়ে আছি। ধন-সম্পদে আমরা দরিদ্র হলেও শালীনতা ও সহজাত লাজুকতার এই সম্পদে আমরা সমৃদ্ধ। এ কারণে যৌনাচারে এখনো আমরা ওদের মত পশু হয়ে উঠিনি। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে আমাদের এই শালীনতার সম্পদ ধ্বংস করার নানামুখী চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্তের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের কাঁচা আবেগকে। ১৪ ফেব্রুয়ারির উন্মাদনা সেই চক্রান্তের একটি অংশ।
আমাদের অনেক রকম ‘দ্বিধা’ আছে। নিজের ভুল স্বীকারের দ্বিধা, গরীব বয়স্ক লোককে সম্মান জানানোর দ্বিধা, কাজের লোককে নিজের বিছানায় বসতে দেওয়ার দ্বিধা, বাবা-মাকে সালাম দেয়ার দ্বিধা ইত্যাদি। এসব নিন্দনীয় দ্বিধা দূর করবার কোনো উদ্যোগ কোথাও চোখে পড়ে না। কিন্তু মানবীয় সহজাত লাজুকতা ও হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হতে ‘কাছে আসার দ্বিধা’ দূর করতে এক শ্রেণির মানুষের নানামুখী চটকদার ক্যাম্পেইনের অন্ত নেই। তারা ‘কাছে আসার’ নামে ১৪ ফেব্রুয়ারি তরুণ-তরুণীদের কাঁচা আবেগে বাষ্প দিয়ে পথে নামিয়ে আনে।
অথচ তথাকথিত কাছে আসার এইসব গল্পের পরেই তৈরি হয় সৃষ্টিকর্তার নাফরমানির গল্প, মা-বাবার অবাধ্যতার গল্প, প্রতারিত হওয়ার গল্প, পরিবার ধ্বংসের গল্প, খুন-ধর্ষণের গল্প, ময়লার ভাগাড়ে নবজাতক পড়ে থাকার গল্প, আত্মহননের গল্পসহ আরো বহু ভয়ংকর গল্প।
কিন্তু যাদের কুমন্ত্রণায় আমাদের জীবন ধ্বংসের এইসব দুঃখগাথা তৈরি হয়, দুঃসময়ে তাদেরকে আর কাছে পাওয়া যায় না। সমাজ নষ্টের কারিগররা ব্যভিচারের আগের গল্প শোনালেও পরের গল্পগুলো আর শোনায় না।
তাই যারা তরুণদের প্রশংসনীয় ‘লাজ’ দূর করতে চায়, নির্মূল করতে চায় দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের থেকেই বরং দ্বিধাহীন দূরে সরার গল্প আমাদের রচনা করতে হবে।
প্রিয় যুবক, আবেগ অনেকটা সফট ড্রিংকসের ঝাঁজের মতো। বেশি সময় স্থায়ী হয় না। অন্তরের আবেগ বৈধ ভালোবাসার জন্য জমিয়ে রাখুন। আবেগ ও প্রেম যদি অবৈধ ভালোবাসায় খরচ করে ফেলেন, যখন বৈধ ভালোবাসা শুরু হবে, তখন আপনার ভালোবাসার পুঁজিতে টান পড়বে।
শ্রদ্ধেয় অভিভাবকবৃন্দ, ১৪ ফেব্রুয়ারির নষ্টামির দিনে আপনার সন্তান কোথায় যায়, খবর রাখুন। ওইদিন আপনি যদি মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদে যান আর আপনার ষোড়শী কন্যা মাথায় ফুলের তোড়া বসিয়ে অভিসারে গমন করে, তবে কাল কেয়ামতের মাঠে এই টুপি ও নামাজ আপনাকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারবে না। আপনি আল্লাহর কাছে দাইয়ুস হিসেবে চিহ্নিত হবেন। আর দাইয়ুসের দিকে আল্লাহ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না বলে রাসুল (সা.) সতর্ক করেছেন।
তাই, আপনার সন্তানকে আগলে রাখুন। ভালোবাসা দিয়ে বোঝান। প্রয়োজনে কঠোর হোন। তবু আদরের সন্তানকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :