শব অর্থ রাত, বরাত অর্থ মুক্তি; শবেবরাত মানে মুক্তির রাত। কিছু অভিশপ্ত লোক ছাড়া আল্লাহতায়ালা এ রাতে সবাইকে ক্ষমার সুযোগ করে দেন। মহান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমার সুযোগ পেতে হলে এ রাত ইবাদত ও বিনয়ের সঙ্গে কাটাতে হবে।
আরবি অষ্টম মাস শাবানে চৌদ্দতম তারিখ দিবাগত রাত তথা পবিত্র শবেবরাতে সূর্যাস্তের পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত মহান আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম আকাশে এসে তার বান্দাকে মায়া আর দয়া নিয়ে ডাকতে থাকেন-কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমার কাছে ক্ষমা চাও-আমি ক্ষমা করে দেব।
কারও রিজিকের প্রয়োজন আছে কি? আমার কাছে চাও-আমি রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমার কাছে মুক্তি চাও, আমি বিপদমুক্ত করে দেব!
শাবানের পরই কৃচ্ছ্রসাধনের মাস রমজান আসে জীবনের সব কালিমা দূর করার ফজিলত নিয়ে।শবেবরাত তাই মুসলমানদের জানান দিয়ে যায় দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা।
বিখ্যাত তাফসিরবিদদের মতে ‘বরকতময় রাত’ মানে শবেবরাত। মহান আল্লাহ শবেবরাতে সবকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শবেকদরে নির্দিষ্ট কিছু লোককে সেসব বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করেন। (তাফসিরে কুরতুবি।)
আমাদের উচিত অপ্রয়োজনে সময় ব্যয় না করে এ পবিত্র রজনিতে আল্লাহর ইবাদত বন্দিগিতে আত্মনিয়োগ করা। তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল হাজাত ও অন্যান্য নফল নামাজ করা।
কারণ নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো-নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। অত্যধিক নফল নামাজ এ রাতের শোভাবর্ধন করে। আমাদের উচিত নামাজে কিরাত ধীরগতীতে পড়া। রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।
অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। দরুদ শরিফ পড়া। অধিক পরিমাণে তাওবা-ইস্তিগফার করা। তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি ইবাদতে মগ্ন থাকা। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের জন্য, সব মুমিন মুসলমান এবং দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
মহান আল্লাহর কাছ থেকে আমাদের পাপ মোচন করানো এবং ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রার্থনা করার এটাই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। শবেবরাত রজনিতে নিজের যাবতীয় গোনাহের জন্য তাওবা করে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের মনের নেক আশা-আকাঙক্ষা পূরণের জন্য ও মৃতদের মাগফিরাতের জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করা।
নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তাওবা-ইসতিগফার, দান-সদকা, উমরি কাজা নামাজ, কবর জিয়ারতসহ ইত্যাদি নফল আমলের মাধ্যমে রাতগুজার করা। তবে মাকবারে তথা কবরে যাওয়া জরুরি নয়। কবর জিয়ারতকে রুসম বা রেওয়াজে পরিণত করা যাবে না।
আল্লামা শামি, ইবনে নুজাইম, আল্লামা শরমবুলালি, শায়খ আবদুল হক দেহলবি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবি, মাওলানা আবদুল হক লখনবি, মুফতি মুহাম্মদ শফিসহ উলামায়ে হানাফিয়ার অভিমত হলো, শবে বরাতে শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী রাত জেগে একাকী ইবাদত করা মুস্তাহাব।
তবে এর জন্য জামাতবদ্ধ হওয়া যাবে না। (আদ-দুররুল মুখতার : ২য় খণ্ড, ২৪-২৫ পৃষ্ঠা/ আল বাহরুর রায়েক : ২য় খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা/ মারাকিল ফালাহ : ২১৯ পৃষ্ঠা)।
হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, হাদিসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নাত অনুযায়ী করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে।
প্রথমত, ১৫ তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সঙ্গে সঙ্গে গরিব-মিসকিনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ওই মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভালো হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, রাত জেগে একা একা বা বিনা দাওয়াতে জড়ো হয়ে যাওয়া দু-চারজনের সঙ্গে ইবাদতে মশগুল থাকা। তৃতীয়ত, শাবানের ১৫ তারিখ নফল রোজা রাখা।
আপনার মতামত লিখুন :