উঁকি দিচ্ছে নতুন একটি বছর। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনের আরও একটি অধ্যায়। নতুন বছরের আগমনে যেমন আনন্দ ও উদ্দীপনার জোয়ার বয়ে যায়, তেমনি বিদায়ী বছরের স্মৃতি আমাদের মনে কেমন যেন এক ধরনের শূন্যতার অনুভূতি জাগায়। প্রতিটি বছরই তার নিজস্ব গল্প বয়ে আনে; সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, উৎসব আর শোকের মিশেলে ভরা থাকে সময়ের এই স্রোত।
২০২৪ সালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। এ বছরটি নানা ঘটনায় সমৃদ্ধ ছিল, যা আমাদের জীবনে রেখেছে গভীর প্রভাব। তবে এর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের বরেণ্য আলেমদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে। এ বছর আমরা হারিয়েছি এমন কিছু প্রাজ্ঞ আলেমকে, যাদের অবদান জাতির হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ বছর আমাদের ছেড়ে যাওয়া সেই মহান আলেমদের কথাই তুলে ধরব যাদের জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য ছিল আলোকবর্তিকা।
মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী
২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশিষ্ট আলেম ও লেখক মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী (৮২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি গণভবন ও সচিবালয়ের সাবেক ইমাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষক ও সম্পাদক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ইসলামের খেদমতে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
মাওলানা আশেকে এলাহী
দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরুল মুদাররিসিন মাওলানা আশেকে এলাহী ইব্রাহীমী ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। দেশের ইলমি অঙ্গন হারিয়েছে প্রবীণ আলেমকে। দীর্ঘদিনের শিক্ষকতায় তিনি রেখে গেছেন এক বিশাল ইলমি উত্তরাধিকার। মাওলানা আশেকে এলাহি ইব্রাহীমী দেশের প্রবীণ আলেমদের একজন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষকতা করে আসছিলেন। দেশ-বিদেশে তার হাজারো সাগরেদ, ভক্ত ও মুহিব্বীন রয়েছে।
মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইলিয়াস
২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের ন্যাশনাল হসপিটাল চট্রগ্রাম এন্ড সিগমা ল্যাব লিমিটেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন দার্শনিক আলেম ও মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইলিয়াস মানতেকি রহ. (ইন্না লিল্লাহি ...রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া ও দারুল মা‘আরিফ আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসায় তাফসির ও ইসলামি দর্শনশাস্ত্র পড়িয়েছেন। তার জানাজার নামাজ হাটহাজারী মাদরাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা লুৎফর রহমান
বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও খ্যাতনামা ইসলামি আলোচক মাওলানা লুৎফর রহমান ২০২৪ সালের ৪ মার্চ রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এই আলেম ব্যক্তিজীবনে ৫ কন্যা ও ২ ছেলের জনক।
কর্মজীবনে তিনি রাজখালি আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। তার ইন্তেকালে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। রুহের মাগফিরাত কামনায় সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী।
মাওলানা মফিজুল ইসলাম
জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ১৯৯৬ সালের ফারেগ হযরত মাওলানা মফিজুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি তার ছেলে তরুণ ওয়ায়েজ মাওলানা উবায়দুর রহমান হুজায়ফী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। ১৬ মার্চ বাদ জোহর নিজ এলাকা ধর্মশুর হামীদিয়া মাদ্রাসা, কেরানীগঞ্জ, রোহিতপুর, ঢাকায় তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় ইমামতি করেন আল্লামা আব্দুল হামীদ, পীর সাহেব মধুপুর। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার সাবেক শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মাজীদ, তাতিবাজার মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মুফতি আব্দুল্লাহ ফারুক, মুফতি মিসবাহ, খুলনা, মুফতি হাবিবুর রহমান আদীব।
হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ
কোরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো পিএইচপি কোরআনের আলোর বিচারক হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ ২৩ মার্চ ২০২৪, শনিবার ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন, মৃত্যুর আগে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার মরদেহ দেশে এনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে চাঁদপুরে দাফন করা হয়। হাফেজ আবু ইউসুফ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও কোরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তার ইন্তেকালে ইসলামি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। জনপ্রিয় এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও কোরআনের প্রেমিকের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হবে।
মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূর
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা, প্রবীণ আলেমেদীন মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূর ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১৩ রমজান (২৪ মার্চ)। সৈয়দপুরে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন তিনি।
১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এই সংগ্রামী আলেম সিলেট আলীয়া মাদ্রাসার থেকে কামিল, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ইফতা বিভাগে পড়াশোনা করেন, তিনি কর্মজীবনে ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুর আলিয়া মাদ্রাসায় ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে অবসর গ্রহণ করেন। উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর সাথে আজীবন সম্পৃক্ত ছিলেন, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন, দাওয়াতি কাজে তিনি তাবলিগ জামায়াতের শীর্ষ মুরুব্বিদের সাথে দেশ-বিদেশে বার বার সফর করেছেন।
মাওলানা ছালামত উল্লাহ
কক্সবাজারের রামু মেরংলোয়া রহমানিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালামত উল্লাহ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (৩ মে)। চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মাওলানা ছালামত উল্লাহ রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দারিয়ারদীঘির বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত নুর আহমদ। পৈত্রিক বাড়ি কক্সবাজারের কলাতলী হলেও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের সুবাদে তিনি রামুর দারিয়ারদিঘী গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন আপন নিবাস।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৫৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে যান। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে রামু মেরংলোয়া রহমানিয়া মাদ্রাসার সহসুপার এবং ২০১৫ সাল থেকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বরেণ্য এ আলেমেদীনের ইন্তেকালে কক্সবাজারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা শামছুল হক
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা শামছুল হক ২৮ মে ২০২৪, মঙ্গলবার দুপুর ২:৩০ মিনিটে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব, তানজীমুল মুদাররিছিন বাংলাদেশের সভাপতি, এবং আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বহু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ও ১৯৬৯ সালে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। তার জানাজা ২৯ মে সকাল ৮:৩০ টায় গওহরডাঙ্গা মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। তার ইন্তেকালে দেশের আলিম সমাজে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাওলানা হাতেম আলী
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক, প্রবীণ আলেমেদীন মাওলানা হাতেম আলী ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১৪ জুন। তিনি নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সোনারগাঁও পরমেশ্বরদী মাদ্রাসায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা হাতেম আলী ব্যক্তিগত জীবনে শায়খুল আরব ওয়াল আজম আল্লামা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর সাগরেদ ও হযরত হাফেজ্জি হুজুরের খলিফা ছিলেন।
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা শায়েখ শারফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (রহ.) এর ইন্তেকালের ৭শ বছর পর তিনি সোনারগাঁওয়ে হাদিসের দরস পুনরায় চালু করেন।
ছারছীনার পীর শাহ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ
ছারছীনা দরবার শরিফের পীর ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমির আলহাজ মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই। রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ছারছীনা দরবার শরীফের তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। ইন্তেকালের সময় মরহুমের বয়স হয়েছিল ৭০ এর কাছাকাছি। এসময় তিনি স্ত্রী, দুইপুত্র, তিন কন্যা ও অনেক নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।
তিনি ফুরফুরার মুজাদ্দেদে জামান আল্লামা আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরাইশী রাহিমাহুল্লাহর পৌত্র ফুরফুরার মরহুম পীর আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী আল- কুরাইশী রাহিমাহুল্লাহর বড় জামাতা ছিলেন।
মাওলানা আব্দুল মালেক (আরজাবাদ মাদরাসা)
রাজধানীর ঢাকার জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের মক্তব বিভাগের সাবেক প্রধান শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১ আগস্ট। তিনি নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মাওলানা আব্দুল মালেক দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। কিডনি ও হার্টের রোগী ছিলেন। কিডনি অকার্যকর হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ডাইলোসিস করতে হত। নিজ গ্রাম কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়্যব (আরজাবাদ মাদ্রাসা)
রাজধানীর প্রাচীনতম দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়্যব ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট। আরজাবাদ মাদ্রাসা ময়দানে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়্যব ছিলেন চাঁদপুরের কারী ইবরাহিম (রহ.) এর নাতনির ছেলে (পুতি)। পাশাপাশি আরজাবাদ মাদরাসার সাবেক মুহতামিম মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী (রহ.) এর বড় জামাতা এবং বর্তমান মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়ার ভগ্নিপতি। ৯০ এর দশক থেকে তিনি জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসার খেদমতে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় একটি মসজিদের খতিব হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
চরমোনাই পীরের বড় ভাই মাওলানা সৈয়দ মোমতাজুল করীম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও বর্তমান চরমোনাই পীর মূুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের বড় ভাই মাওলানা সৈয়দ মোমতাজুল করীম মোশকাত ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ২৭ আগষ্ট। রাজধানীর ইবনে সিনা হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার জানাজা চরমোনাই মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়।
মাওলানা আব্দুল খালিক (শায়েখে চাক্তা)
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত ১৩৫ বছরের গৌরব-ঐতিহ্যের দীনি বিদ্যাপীঠ দারুস সালাম ও দারুল হাদীস লাফনাউট মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল খালিক (শায়খে চাক্তা) ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর। তিনি নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন। মাওলানা আব্দুল খালিক (শায়খে চাক্তা) ছিলেন উপমহাদেশের প্রবাদ পুরুষ, ফিদায়ে মিল্লাত, আওলাদে রাসুল মাওলানা সাইয়েদ আসআদ মাদানী (রহ.) এর খলিফা। শায়খে চাক্তা দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
মাওলানা মঞ্জুরুল আলম
নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ড বাংলাদেশ [এন.টি.কিউ.বি] পরিচালিত ফেনী জেলার, ছাগলনাইয়া উপজেলা শাখা কমিটির সদস্য ও পূর্ব ঘোপাল মুহুরী পুকুরপাড় নূরানী তা'লীমুল কুরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মঞ্জুরুল আলম ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। তিনি এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা মুহিবুল হক
সিলেটের গোলাপগঞ্জে জুমার নামাজের খুতবা দেয়ার সময় মাওলানা মুহিবুল হকের মৃত্যু হয়। অসুস্থতার কারণে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইমামতি থেকে তিনি বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। জুমার নামাজের পরেই এলাকাবাসীর উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই যে তিনি চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে নেবেন এটা কেউ ভাবেননি।
ঘটনাটি ঘটে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪। মাওলানা মুহিবুল হক কানাইঘাট পৌরসভার লালারচক গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গোলাপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের ফাজিলপুর খোরাসানি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। প্রায় ১০ বছর ধরে ফাজিলপুর খোরাসানি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাওলানা মুহিবুল হক। এর আগে তিনি উপজেলার চৌঘরী জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন।
মাওলানা শামসুদ্দোহা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আড়াইহাজার উপজেলা উত্তরের আমির মাওলানা মনিরুল ইসলামের পিতা, আড়াইহাজার গোপালদী ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুদ্দোহা ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাত ১১ টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স ছিল প্রায় ৯৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মাওলানা আবুল কাশেম
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় ভিমরুলের কামড়ে মসজিদের ইমাম ও তার মেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সে সঙ্গে ভিমরুলের কামড়ে আহত হয়েছে তারই ছেলে সিফাত উল্লাহ। মৃত ইমামের নাম মাওলানা আবুল কাশেম (৪৮), তিনি ধোবাউড়া উপজেলা, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়ন দূধনই বাজার জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। ২০২৪ সালের ১২ অক্টোবর এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম (লালবাগ মাদ্রাসা)
ঢাকার জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ এর শুরা সদস্য, প্রবীণ মুহাদ্দিস, প্রখ্যাত আলেমেদীন মাওলানা রফিকুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
হাফেজ মাওলানা আহমদ আলী
নরসিংদী জেলার শীর্ষস্থানীয় আলেমেদীন, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম গনেরগাঁও শাহী ঈদগাহ কমপ্লেক্সে মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আহমদ আলী ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (২৯ অক্টোবর)। তিনি রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর।
হাফেজ মাওলানা আহমদ আলী (রহ.) এর নিজ হাতে সাজানো ইলমি বাগান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম গনেরগাঁও শাহী ঈদগাহ কমপ্লেক্স ময়দানেই প্রবীণ এই আলেমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
মাওলানা আব্দুল আলিম
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তানজিমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল আলিম মারা গেছেন ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার। দেশের শীর্ষ মাদ্রাসা তানজিমুল উম্মাহ এর ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আলেমেদীন শিক্ষাবিদ মাওলানা আব্দুল আলিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ইমাম সমিতির পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
মুফতি আব্দুল গনী আল গাজী
রাজধানী ঢাকার ইসলামবাগ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর প্রথম দিকের খলিফা আল্লামা মুফতী আব্দুল গনী আল গাজী (গাজী সাহেব হুজুর) ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (১৫ নভেম্বর)। তিনি মাগরিবের আগ মুহূর্তে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আশি বছর। ফেনীর ছাগলনাইয়া চাঁদগাজী ভূইয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মাওলানা আব্দুল হান্নান
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার শতবছরের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া কলাকোপা মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান (৬৯) ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর। প্রবীণ এ বুজুর্গ আলেমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে লক্ষ্মীপুর,নোয়াখালী ও ফেনী জেলার আলেম সমাজের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাওলানা আব্দুল হান্নান বৃহত্তর নোয়াখালী বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার শতবছরের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া কলাকোপা মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) ও শাইখুল হাদীস এবং লক্ষ্মীপুর জেলা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ৪৫ বছরের শিক্ষকতার বয়সে তিনি চাঁদপুরের উজানী মাদ্রাসার সাবেক মুহাদ্দিস ছিলেন। প্রবীণ এ আলেম তৈরি করেছেন অসংখ্য আলেম ওলামা ও মুফতি মুহাদ্দিস। মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন ছেলে ও চার মেয়ে সহ অসংখ্য আলেম ওলামা ছাত্র, ভক্ত ও হাজার হাজার গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মাওলানা সোয়াইব
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে মাওলানা সোয়াইব ইন্তেকাল করেন ২০২৪ সালেরও (১৮ নভেম্বর)। রাত ১০টার দিকে পৌরসভার এগারো মাইল এলাকার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের সামনে চট্টগ্রাম হাটহাজারী আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিক্ষক মাওলানা সোয়াইব এগারো মাইল এলাকার শাহ ওয়ালীউল্লাহ হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি সোমবার রাতে তার অসুস্থ এক কাছের আত্মীয়কে দেখতে চট্টগ্রাম শহরে যান। সেখান থেকে এগারো মাইল মাদ্রাসা এলাকায় ফেরার সময় তাকে বহনকারী বাস থেকে নামার সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি মারা যান।
মাওলানা নেছার আহম্মদ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া চরতী গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শিক্ষাবিদ মাওলানা নেছার আহম্মদ ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (২২ নভেম্বর)। তিনি সাতকানিয়ার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মরহুম নেছার আহম্মদ সাতকানিয়া দুরদুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাম্মণডাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তুলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্কুলে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি পাঁচ ছেলে, চার কন্যা, শিক্ষার্থী এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের (একাংশের) সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর। মৌলভীবাজার জেলা সদরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে বেশ কিছু দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরিবার এখানে কেউ না থাকার কারণে হুজুরকে (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় ইমার্জেন্সি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে সিলেট নেয়া হয়। তারপর, সিলেট সদরে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
মুফতি মাহবুবুর রহমান
নরসিংদীতে জুমার খুতবার আগে দাঁড়ানো থেকে স্ট্রোক করে পড়ে যান, তারপর ইমামের মৃত্যু ঘটেছে। ইমামের নাম মুফতি মাহবুবুর রহমান। ২০২৪ সালের (২৯ নভেম্বর) শুক্রবার রাত ৯.০০ টার সময় ব্রেন স্ট্রোক করে ইন্তেকাল করেন তিনি।
মুফতি মাহবুবুর রহমান রাজধানীর চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত শেখ জনূরুদ্দীন র. দারুল কুরআন মাদ্রাসার গত বছরের (২০২৩) ইফতা ফারেগ ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ী নেত্রকোনা।
মাওলানা আবু আহমদ (হাটহাজারী মাদ্রাসা)
চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবু আহমদ ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (২ ডিসেম্বর)। চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মরহুমের জানাজা হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
মাওলানা মোবারক করিম জওহর
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও পবিত্র কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদক মাওলানা মোবারক করিম জওহর ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
মোবারক করিম জওহর বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। একাধিক সমাজসেবামূলক সংস্থার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সারা জীবন দীনের প্রচার কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। মোবারক করিম জওহরের সম্পাদিত কুরআন শরিফের বাংলা তরজমা প্রথম প্রকাশ হয় কলেজস্ট্রিট হরফ প্রকাশনী থেকে। এ অনুবাদটি লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয় হরফ প্রকাশনি থেকে।
মাওলানা আব্দুস সামাদ উসমানী
কিশোরগঞ্জের নিকলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতিব, উপজেলা ইমাম-উলামা পরিষদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সামাদ উসমানী সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (৪ ডিসেম্বর)। বি-বাড়িয়ায় একটি ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
মাওলানা আব্দুস সামাদ বি-বাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানাধীন দরিয়া দৌলতপুর দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের দায়িত্বে ছিলেন।
মাওলানা এনামুল হক শাফী
বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক, কুষ্টিয়া জেলার কৃতি সন্তান, বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদ ও বাংলাদেশ মজলিসুল মুফাসসিরিনের কুষ্টিয়া জেলার সাবেক সভাপতি প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ শিক্ষাবিদ মাওলানা এ কে এম এনামুল হক শাফী ইন্তেকাল করেছেন ২০২৪ সালের (৩ ডিসেম্বর)। তার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় জামায়াতের সুরা সদস্য ও কুষ্টিয়া জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজা উদ্দিন জোয়াদ্দার গভীর শোক প্রকাশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :