ইসলাম ও নৈতিকতা পরকীয়ার সম্পর্ককে কখনোই মেনে নেয় না। ইসলাম এ-জাতীয় অবৈধ সম্পর্কের ভয়াবহ শাস্তির বিধান দিয়েছে। স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে প্রেম ও যৌন সম্পর্ককেই পরকীয়া বলে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। অশান্তি, অনৈতিকতা ইসলাম পছন্দ করে না। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সা. অনৈতিকতাকে কঠোর হাতে দমন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ উপায় দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। অবৈধ উপায় পরিহার করার নির্দেশনাও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কের বিধান দিয়েছেন। পরকীয়া-ব্যভিচার অবৈধ সম্পর্কে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
নারী-পুরুষ সবাইকেই চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা: বনি ইসরাইল ৩২)
ব্যভিচারকারীদের শাস্তি হিসেবে অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারকারী নারী ও পুরুষ উভয়কে ১০০টি করে বেত্রাঘাত করো’ (সুরা: নুর ২)। এটা অবিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি। আর পরকীয়া কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে বিবাহিত নারী-পুরুষ যদি জিনায় লিপ্ত হয়, তাদের জন্য ইসলামে আরও ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা: নুর ২)
হাদিসে নববীতে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেন,
‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কারণ, এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে: তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ু সংকীর্ণ হয়ে যাবে, তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে: সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হাদিস ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হব।’ (বুখারি ৭৬৫৮)
বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পরিবারে দেবরের সঙ্গে ভাবির সম্পর্ক। দেবরকে মৃত্যুর মতো ভয় করতে বলা হয়েছে। কঠিনভাবে হারামের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেয়ো না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? রাসুল সা. বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম হাদিস ২৪৪৫)
বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা পরকীয়া। ব্যাপক হারে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠছে। পরকীয়ায় বলি হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান।
হজরত ওমর রা. মেয়ে হজরত হাফসা রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? তখন হাফসা রা. বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে হজরত উমর রা. চার মাস পরপর মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন। নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক, হাদিস ১২৫৯৪)
তবে কেউ যদি প্রয়োজনে বেশি সময় দূরে থাকতে চান তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী যদি অনুমতি দেন, এ সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন, বাস্তবেও তেমনটি দেখা যায় তাহলে স্বামী চার মাসেরও বেশি সময় দূরে থাকতে পারবেন।
আপনার মতামত লিখুন :