মানুষের ও আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টির অধিকার লঙ্ঘনে আল্লাহ ক্রুদ্ধ হন এবং পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মজলুমকে রক্ষার ও জালিম আর আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে জুলুম যদি করা হয় সীমালঙ্ঘনের পাশাপাশি তাহলে তা আল্লাহর দৃষ্টিতে একটি খুব বড় পাপ এবং এটি এমন সব মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত যা জালিম ব্যক্তি ও সমাজকে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির শিকার করবে এবং জাহান্নামের আগুনই হবে তাদের পরিণতি।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুত: যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। (সুরা বাক্বারা-২২৯)
মহান আল্লাহর অন্যতম একটি সীমা হল অন্যদের অধিকার লঙ্ঘন না করা ও মজলুমের প্রতি সহায়তা দেয়া। ইসলামের দৃষ্টিতে নিপীড়ন মেনে নেওয়া নিন্দনীয় এবং নিপীড়নের মুখে নিষ্ক্রিয় আচরণও কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। জালিম ও জুলুম মোকাবেলার একটি উপায় হল প্রতিশোধ নেয়া, বিশেষ করে জালিমরা যখন সচেতনভাবেই জুলুম করে যাচ্ছে ও তা অব্যাহত রাখতে চায়। জুলুম কখনও কখনও সামাজিক বা সংঘবদ্ধভাবে করা হয়। এক্ষেত্রে বেশি শক্তি নিয়ে মোকাবেলা করা উচিত। প্রথমে জালিমকে এমনভাবে বাধা দিতে হবে যাতে সে জুলুম করার সুযোগ না পায়, এরপরও যদি সে জুলুম অব্যাহত রাখে তাহলে তাকে শাস্তি দিতে হবে যাতে সে আবারও জুলুম করার সাহস না পায়। এই বাধাদান এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে কখনও কখনও এ জন্য জীবনও বিসর্জন দেয়াও জরুরি হয়ে পড়ে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জালিমদের জুলুমের তীব্রতা থেকে রেহাই পায়। ইমাম হুসাইনের আশুরা বিপ্লবই কুরআনের এই নীতি তথা খোদায়ি বিধান বাস্তবায়নের প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সুরা শুরার ২২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্য-স্থল কিরূপ।
সুরা শুরার ৩৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: যারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। সুরা নাহল্-এর ১২৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।
মজলুম বা নিপীড়িতদের সহায়তা করা ফরজ
মজলুম যখন সাহায্যের জন্য আবেদন জানায় তখন তাকে সাহায্য করতে বলে কুরআন। অনেক সময় মানুষ জালিমের অত্যাচারের ভয়ে মজলুমকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না যদিও অন্তরে জালিমের প্রতি তার কোনো আকর্ষণ বা শ্রদ্ধা নেই। কিন্তু ইসলামের নীতি হল মজলুমের সাহায্যের আহ্বানে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে, কেবল জালিম ও জুলুমের প্রতি ঘৃণা করাই যথেষ্ট নয়।
সুরা নিসার ৭৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। সুরা ইব্রাহিমের ১৩ থেকে ১৫ নম্বর আয়াত অনুযায়ী এবং সুরা হজের ৩৯ ও ৬০ নম্বর আয়াত অনুযায়ী আগ্রাসীদের হাত থেকে মজলুমদের রক্ষার কাজ তথা জালিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ মুমিন হওয়ার অন্যতম শর্ত।
সুরা শুরার ৪১-৪২ নম্বর আয়াত অনুযায়ী 'নিশ্চয়ই যে অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।'
পবিত্র কুরআন জুলুম ও জালিমদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধে মজলুমদের জয়ী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এমনকি এ পথে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগেই কেউ যদি শহীদ হয় তাহলে সেও চূড়ান্ত বিজয়ী ও আল্লাহর কাছে তার পুরস্কার সংরক্ষণ করা হবে। সুরা আলে ইমরানের ১৬৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার কাছে জীবিত ও জীবিকা-প্রাপ্ত।
আপনার মতামত লিখুন :