রিজিক আল্লাহতায়ালার প্রদত্ত বিশেষ এক নেয়ামত। আল্লাহর কাছ থেকে আমরা যা কিছু পাই, সবকিছু রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। রিজিক শুধু খাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং খাদ্যের পাশাপাশি সুস্থতা, চাকরি, বিবাহ, ভালো বন্ধু, অক্সিজেন ইত্যাদি। এক কথায় জীবন ধারণের জন্য আমরা যা কিছু পেয়ে থাকি, সব রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।
মানুষ সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের জন্য দুশ্চিন্তা করে সেটা হলো রিজিক। এজন্য চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, এক কথায় যাকে অবলম্বন করে মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা হয় সে ব্যবস্থাকে মানুষ যেন-তেনভাবে টিকিয়ে রাখতে চায়। তাকে নিরাপদ রাখতে চায়। কারণ, সে ব্যবস্থাটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভয়ে। অথচ কোনো ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়া বা না হওয়া, চাকরি থাকা না থাকার সঙ্গে রিজিকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বরং রিজিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে আল্লাহতায়ালার সিদ্ধান্ত। আল্লাহর সিদ্ধান্তে মানুষের রিজিক কমতে পারে, আবার আল্লাহর সিদ্ধান্তে মানুষের রিজিক বাড়তে পারে। অর্থাৎ রিজিকের বিষয়টি একান্তই আল্লাহর হাতে, অন্য কারও হাতে নয় এবং কেউ এর মধ্যে হস্তক্ষেপও করতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে। (সূরা হুদ, আয়াত : ৬)।
মানুষের রিজিকের দায়িত্ব শুধু আল্লাহর কাছে বিষয়টি তেমন নয়, বরং জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর এবং তিনি তার ব্যবস্থা করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আপন মাতৃগর্ভে তোমরা প্রত্যেকেই চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র হিসাবে জমা ছিলে। তারপর চল্লিশ দিন রক্তপিণ্ড হিসাবে, এরপর চল্লিশ দিন গোশতের পিণ্ড হিসাবে জমা ছিলে। এরপর আল্লাহতায়ালা একজন ফেরেশতা পাঠান এবং বান্দার রিজিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য এ চারটি বিষয় লেখার আদেশ প্রদান করেন। (বোখারি।)
এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, আমাদের অবস্থান যখন মায়ের গর্ভে ছিল, তখনই আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। অন্য এক জায়গায় আল্লাহতায়ালা বলেন, অবশ্যই আমি তোমাদের জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি জীবনোপকরণ। (সূরা আরাফ, আয়াত : ১০)।
আমাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করেই আল্লাহতায়ালা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাননি; বরং তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুর বন্দোবস্ত করে রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু আসমানে (আল্লাহর কাছে) রয়েছে। (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ২২)।
সুতরাং, আল্লাহর এত স্পষ্ট ঘোষণার পরও কোনো মানুষ, ইমানদার কোনো ব্যক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তি রিজিক নিয়ে টেনশন করতে পারে না। বরং আমাদের যা করা উচিত তা হলো-
এক. আল্লাহর ওপর যথাযথভাবে ভরসা করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা তালাক, আয়াত : ৩)। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল (সা.)কে বলতে শুনেছি, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ভরসা রাখ। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে খালি পেটে নীড় থেকে বের হয়, আর সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে নীড়ে ফেরে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪; ইবন মাজাহ, হাদিস : ৪১৬৪)।
দুই. যে কোনো কাজের মাধ্যমে রিজিক অন্বেষণ করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধানের জন্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়। (সূরা জুমুআ, আয়াত : ১০)।
তিন. সার্বক্ষণিক আল্লাহকে ভয় করে চলা। যাবতীয় কাজে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি লালন করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য মুক্তির পথ তৈরি করে দেন এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (সূরা তালাক, আয়াত : ২-৩)।
অতএব, যে বিষয়ের কর্তৃত্ব মানুষের হাতে নেই, যে বিষয়টি নির্ধারিত সে বিষয়টি নিয়ে টেনশন করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে উত্তম রিজিক দান করুক। আমিন। সূত্র : যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :