রাশিদুল ইসলাম: [২] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ফিলিস্তিনকে মুসলিম বিশ্বের প্রথম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সোমবার ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনীর (রহ.) ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইমামের মাজারে লাখো জনতার উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ মন্তব্য করেন। পারসটুডে
[৩] আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে ‘আল-আকসা তুফান অভিযান’ পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিযানের ফলে ইহুদিবাদী সরকার এমন একটি পথ বেছে নিয়েছে যা তাকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
[৪] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইমাম খোমেনী (রহ.) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে প্রেসিডেন্ট গর্ভাচেভকে চিঠি লিখে বলেছিলেন যে, তিনি কমিউনিস্ট শাসনের মেরুদণ্ড ভাঙার শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। ইমাম ফিলিস্তিন সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তার বাস্তবায়নও এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
[৫] আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইমাম ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সঙ্গে আপোষ আলোচনার ব্যাপারে আশাবাদী হতে নিষেধ করে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। একমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দখলদার ইসরায়েলকে পিছু হটতে বাধ্য করা যাবে।
[৬] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আল-আকসা তুফান অভিযানে ইসরায়েল এমন আঘাত খেয়েছে যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঠিক সময়ে চালানো ওই অভিযানের ফলে ইহুদিবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র ও কূটপরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। দখলদার ইসরায়েল এমন একটি অবস্থানে চলে গেছে যেখান থেকে আবার কোমর শক্ত করে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না।
[৭] গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যা ও তাণ্ডব চালাচ্ছে তা ইহুদিবাদীদের পরাজয়েরই সুস্পষ্ট প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না জেনেই তারা কাপুরুষের মতো গাজার নিরপরাধ নারী ও শিশুদের ওপর তাদের সব ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছে।
[৮] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা একজন পশ্চিমা চিন্তাবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল-আকসা তুফান অভিযান গোটা বিশ্বকে বদলে দেবে। তিনি বলেন, পশ্চিমা চিন্তাবিদরা মনে করছেন, আল-আকসা তুফান অভিযানে ইহুদিবাদী ইসরাইলের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা পাশ্চাত্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।
[৯] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার ভাষণে গতমাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রায়িসির শাহাদাতের ঘটনাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একজন প্রেসিডেন্টের শাহাদাতের পর শোক প্রকাশ করতে কয়েক মিলিয়ন মানুষের উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই শোক প্রকাশ প্রমাণ করে, ইরানের জনগণ ক্লান্ত হয়নি এবং এদেশের সরকারের সঙ্গে জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে।
[১০] শহীদ রায়িসির শোকে রাজপথে জনতার উপস্থিতি আরো প্রমাণ করেছে, ইরানি জনগণ এখনও বিপ্লবকে গভীরভাবে ভালোবাসে। কারণ, প্রেসিডেন্ট রায়িসি ছিলেন ইসলামি বিপ্লবের একনিষ্ঠ অনুসারী।
[১১] প্রেসিডেন্ট রায়িসির শাহাদাতের ঘটনায় আরো যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, একজন প্রেসিডেন্টের আকস্মিক মৃত্যু সত্ত্বেও ইরানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় বিন্দুমাত্র বিঘ্ন ঘটেনি। এদেশের শাসনব্যবস্থা জনগণের জন্য কতটা শান্তি ও নিরাপত্তামূলক পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছে তা প্রমাণিত হয়েছে। ভাষণের শেষাংশে তিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণকে বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :