এম এম লিংকন:[২] ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাতে বা ২৬ শে মার্চের ( রাত ১২ টা ২০ মিনিটে) প্রথম প্রহরে ইপিআর ( বিডিআর)এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা করেন। এটা সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ কয়েকটি এলাকার জনসাধারণ তা শুনতে পায়। পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা জাহাজ মালিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এটা শুনতে পেয়েছেন বলে একান্ত সাক্ষাতকারে আমাদের নতুন সময়কে জানান বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রকল্প পরিচালক ড. মোফাকখারুল ইকবাল। তখন সেই জাহাজ মালিক কয়েকজন সাংবাদিককে ফোন করে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, তা আমি নিজেই শুনেছি। এরপর তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
[৩] দেশী-বিদেশী উৎস থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা ও মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ শক্তিশালীকরণ- শীর্ষক একটি বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ব্রিটিশ পাথে থেকে মোট ১৫৬টি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংরক্ষণে সেই সময়ের বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকাও সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ ফিল্ম-আর্কাইভ। সংগ্রহ করা এ সব ফুটেজসহ বিভিন্ন বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি আরো পরিস্কার ও সমৃদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছে প্রকল্প পরিচালক।
[৪] বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি কিভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে জানতে চাইলে ড. মোফাকখারুল ইকবাল সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে- ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও- শেখ মুজিবুর রহমান- ২৬ মার্চ, ১৯৭১। দুটি বার্তা ছিল এর মধ্যে সহজটি পরে বাংলা করে বিভিন্নভাবে প্রচার করা হয়। এটি প্রচার হয় কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র চালু হওয়ার ১৮ ঘন্টা আগে।
[৫] আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার বিষয়টি উল্লেখ আছে কি না জানতে চাইলে ড. মোফাকখারুল বলেন, ২৬ শে মার্চের মার্কিন ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডি আই এ) রিপোর্টে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার উল্লেখ করা হয়। এবং হোয়াইট হাউজের সিচ্যুয়েশন রুমের গোপন নথিতে এটা উল্লেখ আছে।
[৬ ] এছাড়া পিডি বলেন, ওয়্যারলেসে ইংরেজিতে স্বাধীনতার যে ঘোষণা দেওয়া হয় এ বিষয়ে লন্ডনের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক ও দক্ষিণ এশিয়া করেসপনডেন্ট ডেভিড লোশাক লিখেছেন, ঘোষণাকারীর গলার আওয়াজ খুব ক্ষীণ ছিল। খুব সম্ভবত ঘোষণাটি আগেই রেকর্ড করা ছিল। ডেভিড লোশাক সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
[৭] পিডি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের গণহত্যা ও অপারেশন সার্চলাইটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী টিক্কা খান এক সাক্ষাতকারে বলেন, মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো কেননা আমি নিজে মুজিবের স্বাধীনতা ঘষোণার স্বকণ্ঠ বাণী শুনেছি।
[৮] পাকিস্থানি কেউ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে জানে কি না এমন প্রশ্নে মোফাকখারুল বলেন, ৭১ সালে পাক-বাহিনীর গণসংযোগ অফিসার সিদ্দিক সালিক তার বিতর্কিত বই উইটনেস টু সারেন্ডার-এ বলেন, ২৫ মার্চ যখন প্রথম গুলি চালানো হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বরটি সরকারি পাকিস্তান রেডিওর কাছাকাছি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্য দিয়ে অস্পষ্টভাবে এসেছিল। যা অবশ্যই ছিল, এবং একটি প্রাক-রেকর্ড করা বার্তার মতো শোনাচ্ছিল যে, শেখ পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসাবে ঘোষণা করেছেন।)
[৯] বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা বিদেশী কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে জানতে চাইলে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ,নিউইয়র্ক টাইমস এবং বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, ইয়াহিয়া খান পুনরায় মার্শাল ল দেয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর আটক।
[১০] প্রকল্প পরিচালক বলেন, এর বাইরে ভারতের বহু সংবাদপত্র এবং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ক্যানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে স্থান পায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের ২৭শে মার্চের সংখ্যার একটি খবরের শিরোনাম ছিলো, বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব।
আপনার মতামত লিখুন :