দেশে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ‘৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র গুঞ্জন উঠেছে’- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ ১/১১তে ছিল। বিরাজনীতিকরণের ঘোষিত নীতি ছিল। এটা কিন্তু হয়নি। এগুলো যারা কল্পনা করে, সেটা কল্পনার মধ্যেই থাকবে। সেটা সম্ভব হবে না। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি।
এই সরকার হচ্ছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাত্ররা এই সরকারকে এনেছে। আমরা মনে করি, এসময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্বটা তারা নিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই সরকার সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামত করবে। আমরা বলেছি, অতি দ্রুত সংস্কার কাজগুলো শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়া প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ যদি জানতে পারে- অমুক তারিখের মধ্যে নির্বাচন ও ভোটার তালিকা হবে, তাহলে এদেশের জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। আর নির্বাচনমুখী হলে আজকে যে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তখন সেই ষড়যন্ত্র জনগণের কাছে পাত্তা পাবে না।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ষড়যন্ত্র হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কারণ পতিত সরকার স্বৈরাচার ছিল। গায়ের জোরে তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। তারা তো এদেশে একটা বিশৃঙ্খলা এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। এগুলো তারা করছে। এটা আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। আর প্রমাণিত হয়েছে, এদেশের ছাত্র-জনতা ভোট দিয়েও সরকার পরিবর্তন করতে পারে, আর ভোট যারা দিতে বাধা সৃষ্টি করে তাদের পতন ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হয়। অতএব আমরা আমাদের দেশের জনগণের ওপর আস্থাশীল।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননাসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়ার বিষয়কে অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, পতিত সরকার পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেছে। তার এই পালিয়ে যাওয়ার এবং সেখানে অবৈধভাবে থাকা এটা পার্শ্ববর্তী দেশের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি না। পতিত সরকারের যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে তারা নানা ষড়যন্ত্র করছেন। এখানে তারা বিশৃঙ্খলা ও বিভেদ সৃষ্টি করতে চান। তারা নানাভাবে উস্কানি দিচ্ছে এবং ভারতের একটি অংশ- বিশেষ করে মিডিয়ায় একতরফাভাবে সংবাদ দিয়ে তারা বিভ্রান্ত করছে। ফলে কিছু ঘটনা ঘটেছে। কলকাতা ও আগরতলায় ঘটেছে। এটা অনভিপ্রেত।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। আমাদের ঘোষিত নীতি যে, আমাদের বন্ধু থাকবে, শত্রু থাকবে না। আবার আমাদের এখানে কেউ দাদা হিসেবেও থাকবে না। আমাদের বন্ধু থাকবে। আমরা এখনো এটা বিশ্বাস করি। ভারত এখানে মিসগাইড হচ্ছে। যেমন চট্টগ্রামে ১ হাজার মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে ভারতে অপপ্রচার করা হচ্ছে। যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা তাদের সাংবাদিক পাঠাক, দেখাক যে, কোথায় মন্দির ভাঙা হয়েছে।
কোথায় হিন্দুদের ওপর দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা কোথাও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না। এটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং বাংলাদেশের পতিত ও স্বৈরাচারী সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটা শ্রেণির লোক এধরনের অপপ্রচার করছে। আমরা বিশ্বাস করি, সারা বিশ্ব এটা বুঝতে পারছে, এজন্য আস্তে আস্তে এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।
বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব। সেটা ভারত হোক, কিংবা অন্যান্য দেশ হোক। কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। এখন শেখ হাসিনার সরকারের সময় তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এবং তার স্বার্থে যদি এমন কিছু চুক্তি ভারতের সঙ্গে হয়ে থাকে, যেটা বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা ও পর্যালোচনা হওয়ার দরকার। আমরা আশা করি, ভারত খারাপ চায় না।
হয়তো শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে একতরফাভাবে অনেক সুবিধা দিয়েছেন। আমরা আশা করি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা অবশ্যই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং যাতে আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলতে পারি, এব্যাপারে গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, দিন ও তারিখ বলতে পারবো না। এখানে আমাদের যে চিকিৎসকরা রয়েছেন তাদের ওপর নির্ভর করছে। উনি যে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে। তাদেরও মতামত দরকার হবে। চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্তটা হবে। অন্যদিকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি। বলেন, ইতিমধ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা আছে, তারমধ্যে অনেক মামলা থেকে অব্যাহিত পাচ্ছেন। মামলাগুলো যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা তত দ্রুত হবে।
নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুনির্দিষ্ট করে দিন ও তারিখ বিএনপি বলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও দেশের জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন। এটা হলেই ষড়যন্ত্র ব্যাহত হয়ে যাবে। এই সরকার নির্বাচন কমিশন করেছে, আমরা আশা করি- নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা নতুন করে তৈরি এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো অতি দ্রুত করে নির্বাচনের একটা তারিখ ঘোষণা করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐক্যের ডাক প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার যেহেতু নির্দলীয়, তারা কিন্তু কোনো দলের সদস্য না। এখানে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে নির্বাচনের দিকে দেশ চলে গেলে নির্বাচিত সরকারের কাছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিতে পারবে। এজন্য প্রথম থেকেই আমরা জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছি। তিন মাস দেশ শাসন করার পরে সরকার এটা উপলব্ধি করেছে। আমাদের বিশ্বাস, নিজেদের জন্য এটা করতে বাধ্য হবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত ও স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আগামীর বাংলাদেশ ভালো দিকেই যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন খন্দকার মোশাররফ। সূত্র : মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :