ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ: বিশ্বজুড়ে বুলডোজার ব্যবহৃত হয়ে আসছে বাড়ি, অফিস, রাস্তা ও বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামো নির্মাণে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের মুসলমানদের বাড়িঘর ও জীবিকা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের উপকরণ হয়ে উঠেছে বুলডোজার। বিবিসি
সর্বশেষ বুলডোজার আলোচনায় আসে জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়ার পর। বিজেপির সাবেক নেত্রী নূপুর শর্মা মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার পর জাভেদ মোহাম্মদ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। এ জন্য বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয় মুসলিম এই নেতার বাড়ি। যদিও বিজেবি দাবি করে অবৈধভাবে নির্মাণের কারণেই তার বাড়ি ভাঙ্গা হয়েছে। বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করা হয় জাভেদ মোহাম্মদকে।
জাভেদ মোহাম্মাদের বাড়ি ভাঙ্গার পর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের সাবেক বিচারক ও আইনজীবীসহ ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি চিঠি দিয়ে মুসলিম রাজনীতিবিদদের বাড়ি ধ্বংসের বিষয়ে শুনানির জন্য অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছেন, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙ্গা বেআইনি ও বিচারবহির্ভূত শাস্তি। মুসলিমদের বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙ্গার পর দেশটির সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। দেশটির শীর্ষ আদালত বলেছেন, আইন অনুসারে বুলডোজারের ব্যবহার হওয়া উচিত। প্রতিশোধমূলক কাজে নয়।
সিনিয়র সাংবাদিক অলোক জোশী বলেন, আদিত্যনাথ দুই বছর আগে কুখ্যাত অপরাধী বিকাশ দুবে ও গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদ মুখতার আনসারির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলকভাবে বুলডোজার ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের সম্পত্তি ভেঙ্গে ফেলার ভিডিও জাতীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু সেই বুলডোজার এখন বিরোধী ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে মুসলমানদের ভয় দেখানোর কৌশল হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।
সাহারানপুর ও প্রয়াগরাজে ধ্বংসের আগে আদিত্যনাথ এক সভায় বলেছিলেন, বুলডোজার অপরাধী ও মাফিয়াদের দমন করতে থাকবে। সরকার এখন বুলডোজারকে একটি শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত করেছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে এটাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অলোক জোশী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দ্বিতীয় বার নির্বাচন জয় লাভ করার পর একটি রোডশোতে, একদল সমর্থক ছোট হলুদ খেলনা বুলডোজার নিয়ে এসেছিল। তারা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে নাচতে-গাইতে বলতে থাকে ‘ওহ বুলডোজারওয়ালা বাবা ফির সে আয়েগা, (ওই বুলডোজার বাবা ফিরবে)।
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি বলেন, যখন বুলডোজার মাফিয়াদের ওপর চলে। এটি অবৈধ ভবনের উপর দিয়েও চলে। কিন্তু যে ব্যক্তি এটিকে লালন-পালন করছে সে ব্যথা অনুভব করে।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর বছরের শুরুতে মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লিতে ধর্মীয় সহিংসতার পর বুলডোজার ব্যবহার হয়েছে। মুসলমানদের বাড়িঘর, দোকান-পাট ধ্বংস করা হয়। জোশী বলেন, আদালত কারো বাড়ি ভেঙ্গে ফেলতে বলেন না। বুলডোজার পাঠানোর মাঝে একটি রাজনৈতিক বার্তা থাকে। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :