মিনহাজুল আবেদীন: সাগরে দুই মাস ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলার পর ১৫ জুন পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে ওই দিন গভীর রাত থেকেই রাজ্যের জেলেরা ইলিশ ধরতে সমুদ্রে পাড়ি জমান। গত তিন বছর টানা এই রাজ্যে ইলিশের আকাল চলায় ইলিশপ্রিয় বাঙালিরা এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। কিন্তু এবার সেই খরা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রথম আলো
গত কয়েক দিনে সাগরে মিলেছে প্রচুর ইলিশ। তবে তা আকারে ছোট। পশ্চিমবঙ্গে একে খোকা ইলিশ বলা হলেও বাংলাদেশে তা জাটকা নামেই পরিচিত।
গত শুক্র ও গতকাল শনিবার এ দুদিনে শুধু ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র পাইকারি মৎস্যবাজারে এসেছে ১১০ টন ইলিশ। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য সমুদ্রবন্দরেও মিলেছে ইলিশ। তবে এর অধিকাংশ খোকা বা জাটকা। দুই-চারটি বড় আকারের ইলিশও পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ থেকে ৫০টি ট্রলারে করে ১১০ টন জাটকা আনা হয় ডায়মন্ড হারবারের পাইকারি বাজারে। জাটকার বাইরে কিছু ইলিশ এসেছে ৬০০ গ্রাম থেকে প্রায় এক কেজি ওজনের। এসব মাছ গতকাল রাতে নিলামে বিক্রি করা হয়। বিক্রি হয়েছে ক্যানিংয়ের পাইকারি বাজারেও। আনন্দবাজার
৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ রুপি কেজি, ৭০০-৮০০ গ্রামের মাছ ৭০০ রুপি ও এক কেজির কাছাকাছি ওজনের বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ রুপি প্রতি কেজি। গত দুই দিন ইলিশের সঙ্গে ধরা পড়েছে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও। নগেন্দ্র বাজারে এক ট্রলারমালিক বলেছেন, সাগর এখন উত্তাল। ঢেউকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইলিশ ধরার নেশায় মৎস্যজীবীরা এখনো সমুদ্রে জাল পেতে অবস্থান করছেন।
এদিকে গত দুদিনে জাটকা বা খোকা ইলিশ ব্যাপকভাবে ধরা পড়ায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এভাবে যদি জাটকা ধরা হয়, তবে এ মৌসুমেও রাজ্যে বড় ইলিশের আকাল দেখা দেবে। তাই ইলিশ ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে জাটকা ধরা বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে। যদিও এখনো রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে ৫০০ গ্রামের নিচের ইলিশ ধরার ওপর। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই একদল জেলে লোভের বশে ২০০-২৫০ গ্রামের জাটকা ধরছেন।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেছেন, এমনিতে সাগর উত্তাল থাকায় বহু ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে যেসব ইলিশ ধরা হয়েছে, তার ৬০ শতাংশই জাটকা।
ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয়কৃষ্ণ হালদার আগেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ইলিশের মৌসুমে এবার ১১ হাজারের বেশি ট্রলার সমুদ্রে ইলিশ ধরতে নামছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ৭ হাজার মৎস্য ট্রলার রয়েছে। এছাড়া ট্রলার রয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘাসহ অন্য সমুদ্র এলাকার মৎস্যজীবীদের। কিন্তু বৃহস্পতিবার সব ট্রলার নামেনি।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ১৫ জুন রাত থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নামখানা, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দীঘি, কুলতলী, পাথর প্রতিমা, সাগরদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, বকখালী, ফলতা, হরিরামপুর, সীতারামপুর, নৈনানের অন্তত আড়াই হাজার ট্রলার নিয়ে ইলিশ ধরতে সমুদ্রে নামেন জেলেরা। এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন এলাকার সমুদ্র উপকূলের কয়েক শ জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে গেছেন ইলিশ ধরতে।
আপনার মতামত লিখুন :