রাশিদুল ইসলাম: [২] সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ডসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্লেষণ করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বিবিসি বলছে, ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায়, শেখ হাসিনার দল এবং মিত্ররা বাকি আসনগুলোতেও জয়ী হবে বলে আগেই আশা করা হয়েছিল। বিএনপি এই নির্বাচনকে বানোয়াট বলে অভিযোগ করেছে।
[৩] বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সরকারি পরিসংখ্যানে প্রায় ৪০ শতাংশেরও কম ভোটারের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, ভোটার উপস্থিতির এই হার বাড়িয়ে বলা হতে পারে।
[৪] আল জাজিরা বলছে, এই নির্বাচনের চমক হচ্ছে দ্বিতীয় অবস্থানে স্বতন্ত্রদের উঠে আসা। কোনও রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মোট ৬৩টি আসন পেয়েছে, যা হাসিনার আওয়ামী লীগের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর এটিই দেশটিতে সংসদীয় বিরোধী দল খুঁজে পেতে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাত্র ১১টি আসন পেতে সক্ষম হয়েছে।
[৫] আল জাজিরা বলছে, প্রায় সব বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীই এমন লোক ছিল যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, কিন্তু দলের নেতৃত্ব তাদের ‘ডামি প্রার্থী’ হিসাবে ভোটে দাঁড়াতে বলে, যাতে নির্বাচনকে বিশ্বের সামনে একটি প্রতিযোগিতামূলক ভোট হিসেবে দেখানো যায়।
[৬] রয়টার্স বলছে, প্রধান বিরোধী দলের বয়কট করা রোববারের এই ভোটে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। তবে শেখ হাসিনা তাদের পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করার পরে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন দিতে অস্বীকার করার পর বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে।
[৭] রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিগত ১৫ বছরে ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা অর্থনীতি এবং বিশাল গার্মেন্টস শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতিত্ব পেয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিবেশী মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসাও অর্জন করেছেন। তবে রোববারের নির্বাচন থেকে বাংলাদেশিরা অনেকটাই দূরে ছিলেন।
[৮] ভারতের মিডিয়া দি প্রিন্টের একটি প্রতিবেদনে জিন্দাল স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনার বয়স বিবেচনায়, এটি তার শাসনামলের শেষ মেয়াদ হতে পারে। নয়াদিল্লি এত বছর ধরে দলটির সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক রেখে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে ভারত সবগুলো ডিম একটি ঝুড়িতে রাখার মত দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের একজন একক ব্যক্তির উপর বিশ্বাস স্থাপনের ঝুঁকি নিচ্ছে। ভারতকে আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশে যে একটি শক্তিশালী ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব রয়েছে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে দত্ত নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তের জন্য বিএনপির সমালোচনাও করেন।
[৯] দি প্রিন্টের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার গেম প্ল্যান যাই হোক না কেন, বিরোধী-মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ শেখ হাসিনার সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন করে তুলবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হচ্ছে তা বাংলাদেশী সমাজকে শেষ পর্যন্ত একটি ব্রেকপয়েন্টে নিয়ে যেতে পারে।
[১০] প্রিন্টের প্রতিবেদনে রুশ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশে নির্বাচনের পর্যবেক্ষক আন্দ্রেই শুতভ শঙ্কা করে বলেন, ‘যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জনগণের ভোটের ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে আরব বসন্তের মতো বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হতে পারে।’
[১১] মার্কিন মিডিয়া সিএনএন’এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর দেশটির সরকার আইএমএফ’র কাছ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। আইএমএফ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কঠোর করতে বলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি করেছিল বিএনপি। শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
[১২] দি গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পিয়েরে প্রকাশ বলেছেন, হাসিনার সরকার স্পষ্টতই ‘কয়েক বছর আগের তুলনায় কম জনপ্রিয়, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের হার কম। এটি একটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক সংমিশ্রণ।’
আপনার মতামত লিখুন :