রাশিদুল ইসলাম : ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে শহরের যেখানে আফরিন ফাতিমার বাড়িটি ছিল সেটি এখন এখন ধ্বংসস্তূপ। বাড়িটিতে তিনি তার চার ভাইবোন এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। বিবিসিকে ফাতিমা বলেন, ঘরটি ছিল এমন একটি জায়গা যেখানে তিনি মুক্ত এবং নিরাপদ বোধ করতেন, এর কাঠ, ইট এবং পাথর তার এবং তার পরিবারের জন্য একটি অভয়ারণ্য তৈরি করেছিল। গত রোববার প্রয়াগরাজের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনো সতর্কতা ছাড়াই বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে। তাদের অভিযোগ বাড়িটি অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে। ফাতিমা ও তার পরিবার এই দাবি অস্বীকার করেছে।
ফাতিমার অভিযোগ, তার পরিবার তাদের জিনিসপত্র সংরক্ষণ করার সুযোগ পায়নি। বাড়িটি এখন একটি স্মৃতি, আর কিছুই বাকি নেই। বিজেপি নেতাদের মহানবীকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ভারতের উত্তরপ্রদেশ সহ কয়েকটি রাজ্যে মুসলমানদের বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠার দুই দিন পরে, বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফাতিমার বাবা, একজন স্থানীয় রাজনীতিবিদ জাভেদ মোহাম্মদ, যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছে উত্তর প্রদেশ সরকার। তার মেয়ে - আফরিন ফাতিমা একজন বিশিষ্ট মুসলিম কর্মী যিনি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন এবং ভারতীয় স্কুলে ছাত্রদের হিজাব পরা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করার অভিযোগ এনে ভারতের বিরোধী নেতারা তাদের বাড়ি ভাঙার নিন্দা জানিয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও গভীর হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা এবং আক্রমণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুম্মার নামাজের পর পাথর নিক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত মুসলমানদের আরও দুটি বাড়িও উত্তরপ্রদেশে ধ্বংস করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ অবৈধ নির্মাণকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও আইনী বিশেষজ্ঞরা এর আইনি অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন - এবং বাড়িগুলি মূলত মুসলিমদের।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অসীম আলী বিবিসিকে বলেন, একটি বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজটি বিশেষভাবে নিষ্ঠুর কারণ বাড়িগুলি নিরাপত্তার প্রতীক- আপনার বাড়ি তৈরিতে সারা জীবনের কাজ লাগে। মুসলমানদের টার্গেট করার জন্য বুলডোজার ব্যবহার করে, সংবিধান বহির্ভূত উপায়গুলি সহজেই প্রয়োগ করে তাদের বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে যে জাভেদ মোহাম্মদ প্রতিবাদ বিক্ষোভের অন্যতম ‘প্রধান ষড়যন্ত্রকারী’ এবং তার মেয়ে ‘কুখ্যাত কর্মকাণ্ডে জড়িত’ ছিল। বাবা-মেয়ে একসঙ্গে ‘অপপ্রচার’ করেছে, পুলিশ এ অভিযোগও আনে। ফাতিমা এবং তার ভাই মোহাম্মদ উমাম এটি অস্বীকার করে বলেন, তাদের বাবা বা বোন কেউই বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ফাতিমার ভাইয়েরা মাঝে মাঝে তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এত সোচ্চার হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করতেন, কিন্তু আমরা কেউই ভাবিনি যে আমাদের এর জন্য এরকম মূল্য দিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :