শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৬ জুন, ২০২২, ০২:১৪ দুপুর
আপডেট : ০৭ জুন, ২০২২, ১১:২৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতে নবীজিকে (সা:) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, ক্ষুব্ধ মুসলিম বিশ্ব

রাশিদুল ইসলাম : ভারতে টেলিভিশনের বিতর্ক অনুষ্ঠানে নবীজি হজরত মুহম্মদ (সা:) ও তার স্ত্রী আয়েশার (রা.) বিয়ে নিয়ে টুইটারে অবমাননাকর মন্তব্য করেন উত্তর প্রদেশের কানপুরে বিজিপি’র নেত্রী নূপুর শর্মা। তাকে সমর্থন দেন দিল্লি বিজেপি’র মিডিয়া শাখার প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল।

এনিয়ে ভারতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ পর্যন্ত ঘটে। গত শুক্রবার এ ঘটনার বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দেয় মুসল্লীরা। জুমার পর রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ মুসলিম বিক্ষোভকারীদের বেদম প্রহার ও লাঠিচার্জ করে। গ্রেফতার করে ২০ জনকে। মামলা করে হাজার হাজার অজ্ঞাত বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে।

এক চিঠিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সম্পাদক ওম পাঠক জানিয়ে দিয়েছেন, দলবিরোধী কথা বলেছেন আপনি। দল এই বক্তব্যকে সমর্থন করে না। বিস্তারিত তদন্তের আগে আপনাকে দলের পদ এবং দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হল।

এদিকে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান, ইরান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, বাহরাইনসহ একাধিক মুসলিম দেশ এ ব্যাপারে ভারত সরকারের কাছ থেকে অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ও নিন্দা দাবি করেছে। এসব দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর ব্যাখা দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তান এক বিবৃতিতে শর্মার চরম অবমাননাকর মন্তব্যের ‘কঠোরতম প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। কাতার বলছে ভারত সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেঙ্কাইয়া নাইডুর কাতার সফরের দ্বিতীয় দিনে দোহায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব বলে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনও বিজেপি মুখপাত্রের ইসলাম অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। ভারতে ইসলাম অবমাননার নিন্দা জানিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি।

বিশেষ করে আরব দেশগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে বলে ভারতীয় মিডিয়াগুলো শঙ্কা প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে বিজেপির ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে  নেওয়া ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে কাতার। 

এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি বলেছেন, এভাবে ইসলামভীতির বিষয়ে অব্যাহতভাবে শাস্তি না দেয়া বড় এক বিপদ তৈরি করে। এতে মানবাধিকারের সুরক্ষা বিপদে পড়ে। ফলে আরও কুসংস্কার ও একপেশে করে রাখার রীতিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। তাতে সৃষ্টি হবে সহিংসতা ও ঘৃণা। বিশ্বে কমপক্ষে ২০০ কোটি মুসলিম মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করেন। তাকে নিয়ে এ ধরনের অবমাননাকর মন্তব্য ধর্মীয় ঘৃণায় উস্কানি এবং মুসলিমদের আহত করতে পারে। 

এদিকে বিজেপি এক বিবৃতিতে যেকোনো ধর্ম বা যেকোনো সেক্টর বা আদর্শকে অবমাননার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেছে, এমন দর্শনসম্পন্ন ব্যক্তি বা তার দর্শনকে অনুমোদন করে না বিজেপি। প্রতিটি নাগরিককে তার পছন্দমতো ধর্মচর্চা, সম্মান দেখানোর অধিকার দিয়েছে ভারতীয় সংবিধান। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনা তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে আরব বিশ্বে। বিভিন্ন দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় ভারতীয় দূতকে প্রত্যাহার এবং ইন্ডিয়ান পণ্য বয়কটের। কুয়েত, কাতার ও ইরান তাদের দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং অফিসিয়ালি রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদী স্মারকলিপি তুলে দেয়। তারপর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

এদিকে, নুপূরের মন্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর পরই তার নামে ইরফান শেখ নামে রাজা অ্যাকাডেমির মুম্বই শাখার সচিব এফআইআর দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, জ্ঞানবাপী ইস্যুতে নুপূর ইচ্ছা করে হজরত মুহম্মদ (সা:)কে বিতর্কে টেনে আনেন। তেহরানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করলে তিনি এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ইসলামের নবীর প্রতি অবমাননাকর কোনো মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।তিনি দাবি করেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দলের দু’জন নেতা ইসলাম অবমাননাকর যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ভারত সরকারের নীতি-অবস্থান ফুটে ওঠেনি; এটি তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। ভারত সরকার সব ধর্মের প্রতি সম্মান জানায়। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়