তারিক আল বান্না: থোমামুন খোয়াসাত নামক এক ব্যক্তি মনবেদনা দিয়ে তাঁর চার বছরের কন্যাকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, জানালার বাইরে যে হলুদ রঙের মেঘের মতো কিছু একটা দেখা যায়, যা কল্পনাকে জাগিয়ে তোলে, তা আসলে মেঘ নয়। আসলে সেটা তার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খোয়াসাত কন্যাকে মারাত্মক বায়ুদূষনের কথাই আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছে। প্রতিনিয়তই এই বায়দূষনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তারা। কিন্তু তার মাত্রা কোনোমতেই কমছে না। ব্যাপকভাবে খামার পোড়ানো এবং বনের দাবানলে এই বায়ুদূষন সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে মেঘের মতোর যে ধোঁয়াশা, তা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ঘন। যা বিভিন্ন বাসস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ভ্রমাণকারীদের পছন্দের চিয়াং রাই প্রদেশে এই বায়ুদূষনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এমনকি রাজধানী ব্যাংককেও বায়ুদূষনের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে প্রতিদিনই বাতাসের মানস্তর পরীক্ষা করছে।
খোয়াসাত চিয়াং রাইয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘এই দীর্ঘ সময়ে আমি এমন ভয়াবহ বায়ুদূষন দেখিনি। আমার মেয়ে হলুদ মেঘের মতো ধোঁয়াশা দেখে মনে মনে খুশি হতে পারে। কিন্তু তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া করার কিছু নেই। সে অল্প বয়সী বলে আসল বিষয়টি বোঝে না, সে হয়তো ভাবছে এসব প্রাকৃতিক কুয়াশা। কিন্তু সত্য কথা হলো, এটা বিষাক্ত ধোঁয়াশা।’ চিয়াং রাই’র মায়ে সান হাসপাতালের চিকিৎসক ড: ভিরা ইসারাথানন বলেন, ‘আমরা নবজাতকদের জন্য বেশি চিন্তিত। কারণ, তারা ফেস মাস্ক পড়ে থাকে না, মাস্কে বিরক্ত বোধ করে। পরিশোধক ডিভাইসের কারণে আস্থার জায়গা নার্সারীও দূষিত হতে পারে।’ ড: ইসারাথানন আরো বলেন, নবজাতক শিশুদের ফুসফুস সবেমাত্র কাজ শুরু করে বলে সহজেই তারা বায়ুদূষনের শিকার হতে পারে।
থাইল্যান্ডের বায়ুদূষন প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে একটি আলোচিত বিষয়ে পরিনত হয়। যা নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তবে প্রধানত; চাষীরা আখ ও ধানের মাঠের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলায় এই বায়দূষণ সৃষ্টি হয়। তবে এ বছর ধোঁয়াশার অবস্থা বেশি ভয়াবহ।
গত ১০ মার্চ থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম নয় সপ্তাহে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ বায়ূদূষনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রায় দুই লাখ ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বায়ূদূষনে পাহাড়কেও ঢেকে ফেলে, সবুজ গাছপালার রং ধূষর হয়ে যায়। শহরে ড্রোন থেকে নেওয়া ফুটেজে দেখা গেছে, বিভিন্ন পার্ক, রাস্তাকে চেনার কোনো উপায়ই নেই। এছাড়া, বিল্ডিংগুলো ধোঁয়ার কারণে স্পষ্ট আকারটা বোঝা যাচ্ছে না।
টিএবি/এইচএ
আপনার মতামত লিখুন :