রাশিদুল ইসলাম : [২] ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মধ্যপ্রদেশের একটি মসজিদে অগ্নি সংযোগ করেছে। পাকিস্তানের দৈনিক জাঙ্গ পত্রিকা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেছে, মধ্যপ্রদেশের নিমুচ এলাকায় অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেখানকার মুসলমানদের ঘরবাড়িতেও পাথর ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে হামলা চালিয়েছে এবং এতে অন্তত ২৩ জন মুসলমান আহত হয়েছে। পারসটুডে
[৩] এদিকে, অপর এক ঘটনায় উত্তর প্রদেশ রাজ্যে সন্তানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করায় এক মুসলিম নারীকে গুলিকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছুদিন আগে রাজস্থান রাজ্যের কেরাওয়ালি এলাকায় মুসলমানদের অন্তত ৪০টি বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এভাবে সাম্প্রতিক বছরের ঘটনাবলী লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সরকার ধর্মের নামে উগ্র জাতীয়তাবাদকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালানো ছাড়াও তাদের ধর্মীয় স্থাপনারও অবমাননা করছে।
[৪] প্রায় তিন বছর আগে কেন্দ্রিয় সরকার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির এলাকার বিশেষ ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর নানা ক্ষেত্রে তাদের ওপর আরো কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এ ছাড়া ভারতে বিতর্কিত জন্ম নিবন্ধন আইন বা এনআরসি, অভিবাসন বিরোধী আইন প্রণয়ন যা কিনা সম্পূর্ণ মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী প্রভৃতি কারণে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের ওপর হামলা ও জুলুম নির্যাতন চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ মধ্যপ্রদেশের নিমুচ এলাকার একটি মসজিদে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের অগ্নি সংযোগের ঘটনা থেকে বোঝা যায় নিরাপত্তা বাহিনীর ছত্রছায়ায় এসব উগ্রবাদীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
[৫] গত এপ্রিল মাসে মধ্যপ্রদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উৎসব চলাকালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের শত শত ঘরবাড়ি বুল ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। হৃদয় বিদারক ওই ঘটনায় হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুর কান্না ও আহাজারির দৃশ্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
[৬] পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের অগ্নি সংযোগের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০২০ সালে অন্তত ছয়টি মসজিদে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিদ্বেষ ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভারত জুড়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরই জেরে বহু পুরানো ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং এরপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে বহু নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
[৭] প্রকৃতপক্ষে, ভারতের বিজেপি সরকারের কিছু ভুল নীতির কারণে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তার ঘটছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি সরকার কেন উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিতে চায়। অভিযোগ রয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপি সবসময়ই নির্বাচনে জেতার জন্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মোকাবেলায় নিজেদের শক্তিমত্বা প্রদর্শনের জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদকে ব্যবহার করে থাকে। আর এ কারণে প্রায়ই মুসলমানদের ওপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটছে।
আপনার মতামত লিখুন :