রাশিদ রিয়াজ : ‘যতদিন না আমরা মঙ্গল গ্রহে কলোনি বানাতে না পারছি, ততদিন আমি থামব না।’ এমনই বলেছেন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এলন মাস্ক। অনেকের ধারণা, মাস্ক সফল হতেই পারেন। কারণ তার পক্ষে অসম্ভব কিছু নেই। যে কোনও সফল ব্যক্তির মতোই তার জীবনে আছে অনেক ওঠাপড়া। সোমবার রাতে তিনি টুইটারের মালিক হয়েছেন। তারপরে তাকে নিয়ে নতুন করে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। দি ওয়াল
ছোটবেলায় এলন মাস্ক ছিলেন নিতান্ত গোবেচারা। ক্লাসের ছেলেরা নিয়মিত তার ওপরে অত্যাচার করত। পরে তিনিই সুযোগ পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে টেসলা ও স্পেস এক্স নামে দু’টি কোম্পানির সিইও হলেন তিনি। আরও তিনটি কোম্পানির তিনি প্রতিষ্ঠাতা। বিবাহ করেছেন মোট তিনবার। বেশ কয়েকটি সন্তানের জনক তিনি।
বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন মাস্ক। করোনাভাইরাস নিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা অনেকের পছন্দ হয়নি। তিনি বলেছেন, লকডাউন করার কোনও মানে হয় না। এমনও বলেছেন, বেশিদিন বিধিনিষেধ জারি থাকলে তিনি করোনাবিধি ভাঙবেন। মাস্ক বানিয়েছেন স্পেস রকেট, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, সোলার ব্যাটারি এবং আরও অনেক কিছু। হলিউডের ‘আয়রন মাস্ক’ ফিল্ম তার জীবনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মাস্কের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রায় তিন লাখ কোটি রুপি। বিভিন্ন দেশে জমি ও বাড়িতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মাস্ক। একসময় তিনি বলেছিলেন, নিজের সব বাড়ি বেঁচে দেবেন।
মাস্ক দাবি করেছিলেন, ম্যালেরিয়ার ওষুধ করোনা সারাতে পারে। যদিও এই মন্তব্যের পক্ষে তিনি কোনও প্রমাণ দেননি। করোনা সংক্রমণ যখন তুঙ্গে, তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালকে ভেন্টিলেটর দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু দেননি। তিনি প্রচার করেছিলেন, শিশুরা কোভিডে আক্রান্ত হয় না। পরে এই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। একসময় ‘অ্যাকুমেন’ ছবির অভিনেত্রী অ্যাম্বার হিয়ার্ডের সঙ্গে ডেটিং করতেন মাস্ক। দু’জনের ছাড়াছাড়ি হয় ২০১৭ সালে। ‘রোলিং স্টোন’ ম্যাগাজিনকে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছিলেন, এই ছাড়াছাড়ি তার কাছে খুবই বেদনাদায়ক ছিল।
২০১৭ সালে নিউরোলিঙ্ক নামে একটি কোম্পানি তৈরি করেছিলেন মাস্ক। তার উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে চিপ বসিয়ে দেওয়া। একসময় তিনি ‘হাইপারলুপ’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। হাইপারলুপ হচ্ছে একধরনের সুড়ঙ্গ। তার মধ্যে দিয়ে ট্রেন চলবে অবিশ্বাস্য গতিতে। লস এঞ্জেলিস থেকে সানফ্রানসিস্কো যেতে সময় লাগবে মাত্র আধ ঘণ্টা।
এদিকে ভারতের বাজারে টেসলাকে স্বাগত জানালেও দেশটির পরিবহনমন্ত্রী বলেছেন চীনে গাড়ি বানিয়ে ভারতে বেচলে চলবে না। ভারতে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের বাজার ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে পেট্রল-ডিজেলের দাম যে ভাবে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাতে বিদ্যুতে চলা গাড়িই ভবিষ্যত বলে প্রায় সকলে মনে করছেন। সে জন্য ঘরোয়া গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টাটা মোটরস, মাহিন্দ্রা থেকে শুরু করে বহুজাতিক সংস্থাগুলি এক সঙ্গে গুচ্ছ ই-ভেহিকেলের মডেল নিয়ে আসছে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল তৈরিতে ইতিমধ্যে দুনিয়া জুড়ে নাম করে ফেলছে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা। তারাও ভারতের বাজার ধরতে মরিয়া। আর সেই কারণে দিল্লিতে দৌত্যও শুরু করে দিয়েছে। যাতে তাদের গাড়ির উপর আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সে ব্যাপারে নিতিন গডকড়িকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চীনে গাড়ি বানিয়ে ভারতে বিক্রি করা ভাল প্রস্তাব নয়। টেসলা চাইলে ভারতে তাদের শো-রুম খুলতেই পারে। কিন্তু ভারতে বেচতে হলে গাড়ি এখানেই বানাতে হবে। বস্তুত গডকড়ি মোদি সরকারের দর্শন তথা নীতিই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। কেন্দ্র মেক ইন ইন্ডিয়াতে জোর দিতে চাইছে। সেই কারণে ইতিমধ্যে বহুজাতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির অনেকেই ভারতে প্লান্ট তৈরি শুরু করে দিয়েছে। তাতে তাদের বিভিন্ন গাড়ির মডেলের দাম ভারতীয় বাজারে কমেছে। তা ছাড়া গাড়ির পার্টসের জন্য ক্রেতাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে থাকা ইত্যাদি ঝক্কিও কমেছে। তবে অটো-কার বিশেষজ্ঞদের মতে, টেসলার ভারতে আসা এক প্রকার চূড়ান্ত। তা কী আকার নেবে সেটাই এখন দেখার।
আপনার মতামত লিখুন :