শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:৫৩ রাত
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ০৯:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যা বাড়ছে

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দেশটির বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের মধ্যে বেড়েছে আত্মহত্যার হার। একটি যুগান্তকারী প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার উচ্চ হারের বিষয়টি উঠে আসার পর এটিকে একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সময় অনলাইন

প্রতিবেদনে বলা হয়, আট মাস ধরে কয়েকশ মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সরকারি একটি তদন্ত সংস্থা। সংস্থাটি দেশটির সাবেক ও বর্তমান চাকরিজীবীদের সাক্ষাৎকার নেয়। রাজকীয় কমিশনের নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, অত্যধিক জটিল প্রশাসনিক পদ্ধতির কারণে অস্ট্রেলিয়ার চাকরিজীবী নারী ও পুরুষরা কার্যত সংগ্রাম করছেন এবং চাকরি থেকে অব্যাহতির পর নানামুখী সহায়তা-সমর্থনের অভাবে জীবনযাপন করছেন।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্ষমা চেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। একইসঙ্গে রিপোর্টে উল্লেখ করা সুপারিশগুলোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

অস্ট্রেলিয়ার ভেটেরান্স বিষয়ক মন্ত্রী ম্যাট কিয়োগ বলেছেন, এটি খুবই বিপর্যয়কর যে গেল ২০ বছরে আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়া যত সেনা হারিয়েছে, তার চেয়ে বেশি সাবেক ও বর্তমান সেনা আমরা হারিয়েছি আত্মহত্যার কারণে।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ২০০১ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এডিএফ) বর্তমান এবং সাবেক সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি সদস্যের । গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় প্রবীণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি।

দ্য রয়্যাল কমিশন ইন ডিফেন্স অ্যান্ড ভেটেরান সুইসাইড তাদের রিপোর্টে আত্মহত্যার এই উচ্চহারের বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখিত প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাকরিরত অবস্থায় শারীরিক এবং মানসিক আঘাতের শিকার হওয়া ও মোকাবিলা করা, (সামরিক জীবন থেকে) বেসামরিক জীবনে স্থানান্তরসহ আরও বেশ কয়েকটি কারণ।

এই প্রতিবেদন তৈরির সময় রয়্যাল কমিশন দেশজুড়ে ব্যক্তিগত এবং পাবলিক শুনানির আয়োজন করে এবং এতে বহু মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। অভিজ্ঞতা শেয়ারের এই তালিকায় ছিলেন অস্ট্রেলীয় সিনেটর ও দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক সদস্য জ্যাকুই ল্যাম্বিও।

অভিজ্ঞতা জানানোর সময় জ্যাকুই ল্যাম্বিও জানান, কীভাবে তিনি তার ছেলেদের কাছে বিদায়ী চিঠি লিখেছিলেন এবং সেনাবাহিনীতে আহত হওয়ার পরে ও সরকারের সাথে ক্ষতিপূরণের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরে তার জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন।

জ্যাকুই ল্যাম্বি বলেন, বেঁচে থাকার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়াটা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। এমনকি আমার ছেলেদের জন্যও। বেঁচে থাকার জন্য আমার আর কোনো লড়াই বাকি ছিল না।

দেশটির আরেক সাবেক সেনা সদস্য রয়্যাল কমিশনের শুনানিতে বলেন, আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসার পরে তিনি যা দেখেছিলেন তা সামলাতে না পেরে তার জীবন কীভাবে বিষিয়ে উঠেছিল।

বিবিসি বলছে, বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যার হার নিয়ে দ্য রয়্যাল কমিশন ইন ডিফেন্স অ্যান্ড ভেটেরান সুইসাইডের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সদ্য প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে, কমিশনাররা প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সাংস্কৃতিক সমস্যা এবং আত্মহত্যার উচ্চ হার মোকাবিলায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

কমিশনাররা বলছেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে দায়িত্বপালনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবির বিষয়ে জমে থাকা বিশাল কাজ সম্পন্ন করার ওপরই অনেকের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে।

জনমনে সাড়া ফেলে দেয়া এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্ষমা চেয়েছেন মন্ত্রী ম্যাট কিয়োগ। এরপর তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, প্রতিবেদনে কমিশনের উল্লেখিত সুপারিশগুলো তার সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করবে। আর এ লক্ষ্যে গেল মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর এই সরকার ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ৫০০ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

দ্য রয়্যাল কমিশন ইন ডিফেন্স অ্যান্ড ভেটেরান সুইসাইডের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ হবে ২০২৪ সালের জুন মাসে। তবে এর আগে আরও শুনানি করবে রাজকীয় এই কমিশন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়