ইমরুল শাহেদ: পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ফিরে আসবে, এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে একমত হয়েছে চীন। সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের ১৬তম বৈঠকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি থেকে পুরোপুরি সেনা পিছনো ও সেনার সংখ্যা কমানো নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বৈঠকও হয়। সেখানে নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের সঙ্গে একমত হয়েছে চীন।
কিন্তু এর পরেও পূর্ব লাদাখে ভারতের আকাশসীমায় বারে বারেই ঢুকে পড়তে দেখা গেছে চীনা যুদ্ধবিমানকে। সীমান্ত এলাকার আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে চীনের ড্রোন। নিয়ম ভেঙে আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় চীনা বাহিনীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। দি ওয়াল
সেনা সূত্র বলছে, পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকায় চীন তাদের এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম বসিয়েছে। সেখানে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের মহড়া চলছে। সেই মহড়াই ভারতীয় সীমান্তের দিকে চালনা করা হয়েছে। রাডারেও ধরা পড়ে যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি। চুক্তি অনুযায়ী, এলএসি-র ১০ কিলোমিটারের মধ্যে দু’দেশের আকাশযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু চীন সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না বলেই অভিযোগ ভারতের।
সীমান্তের খুব কাছেই প্রচুর যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে রেখেছে চীন। ২০২০ সালে যখন চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি দলে দলে তাদের সেনা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন করা শুরু করেছিল তখন থেকেই সীমান্তের পরিবেশ ক্রমেই ঘোরালো হতে শুরু করেছিল। ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছিল, নতুন করে সেনা মোতায়েন করছে চীন। সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে। সেনাদের থাকার অস্থায়ী ছাউনিও তৈরি হচ্ছে।
ডিসএনগেজমেন্ট বা সেনা পিছনোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে দেখা গেছে, লাল ফৌজ তাদের রুটগ বেসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে থেকেই এই ঘাঁটি সাজিয়ে তোলার কাজ চলছিল। এখনকার উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, সেখানে ছোট ছোট ঘরের মতো কাঠামো তৈরি হয়েছে। ক্যাম্প খাটানো হয়েছে। অস্ত্র রাখার জায়গাও আছে। রাইফেল ডিভিশনও মোতায়েন করা হয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট, এখনই সীমান্ত ছেড়ে যেতে রাজি নয় চীন।
পূর্ব লাদাখে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রথম নয়। আগেও বহুবার হয়েছে। কিন্তু সামরিক ও ক‚টনৈতিক স্তরে বৈঠকের পরে তার সমাধানও করা গেছে। কিন্তু ১৫ জুন গালওয়ানের মুখোমুখি সংঘাতের পরে সীমান্ত পরিস্থিতি চরমে ওঠে। দফায় দফায় বৈঠকেও শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বরং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানাচ্ছে, উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গং লেক ও তার সংলগ্ন পাহাড়ি খাঁজ থেকে লাল সেনা সরেছে ঠিকই, তবে অন্যদিকে গোগরা, হট স্প্রিং, দেপসাং ভ্যালিতে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। অস্ত্রসস্ত্রও মজুত হচ্ছে। নতুন করে অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় চীনের ফৌজ যে হামলা চালাতে পারে, সে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :