রাশিদুল ইসলাম: মার্কিন মিডিয়া ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঋণের জন্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র কাছেও ঋণ চাইবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩৯.৬৭ বিলিয়ন ও পাকিস্তানের তা হচ্ছে ৯ বিলিয়নের কম। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সহ ঋণদাতাদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে রয়েছে, যাতে দেশটি অর্থসংস্থান মজবুত হয় কারণ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে দৈনিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ হ্রাস পাচ্ছে।
ঢাকা-ভিত্তিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, একটি ঋণ প্যাকেজের মাধ্যমে আইএমএফের ঋণ পাওয়া গেলে তা বাজারকে স্থিতিশীল করবে এবং আমরা কিছু তহবিল পাব যা আমাদের রিজার্ভকে বাড়িয়ে তুলবে। তার মতে এটি সেরা কৌশল।
৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের রয়েছে শক্তিশালী গার্মেন্টস খাত। এখাত পশ্চিমা দেশগুলোর বিখাত ব্র্যান্ড চেইনগুলোতে পোশাক রপ্তানি করছে। দাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে এধরনের ঋণ বাংলাদেশ পূর্বেও নিয়েছে বা এক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের এ ঋণ চাওয়া তার প্রতিবেশী পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার চাওয়া বেলআউট তহবিলের সাথে সমতুল্য নয়। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো অর্থনৈতিক সংকটে নেই। আমরা ভবিষ্যতের যেকোনো প্রয়োজনে এই তহবিল সংগ্রহ করছি। আমাদের যখন দরকার তখন টাকা কোথায় পাব? তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আরও ব্যয়বহুল আমদানির জন্য দেশটি প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককের কাছেও ঋণ চাইতে পারে।
এদিকে বিনিয়োগ কোম্পানি মুডি বলছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে চাপে থাকলেও এখনো এর সংকটের ঝুঁকি রয়েছে কম। গত এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩৯.৬৭ বিলিয়নে দাঁড়ালেও এখনো তা দিয়ে আগামী চার মাসের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আইএমএফ কোনো দেশের তিন মাসের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে। বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে, ২২ জুলাই পর্যন্ত পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ৮.৫৭ বিলিয়ন, যা দুই মাসেরও কম মূল্যের আমদানির জন্য যথেষ্ট যেখানে জুনের শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার ১.৮৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে রিজার্ভে চীন থেকে শর্তসাপেক্ষে ১.৫ বিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। দক্ষিণ এশীয় এই দুই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদের আইএমএফের বেলআউট করার ঝুঁকি এবং তাদের বাজারকে আরো সংকটময় করে তুলেছে।
এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিং এই সপ্তাহে পাকিস্তানের ঋণ রেটিং নেতিবাচক বলেছে। এই রেটিং এজেন্সি ২০২০ সাল থেকে পাঁচবার শ্রীলঙ্কাকে ডাউনগ্রেড করলেও ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের মূল্যায়ন অপরিবর্তিত রেখেছিল। বাংলাদেশে, বিনিয়োগকারীরা কম ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে মূলধন স্থানান্তর করায় এবং শ্রীলঙ্কার পথে আরও দেশগুলি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্যের ১০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। কিছু মানি চেঞ্জার ডলার প্রতি ১১২ টাকা চার্জ করার পর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সপ্তাহে এধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে সক্ষম এবং বিদেশী ব্যাংকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ভালো বাজার।
আইএমএফ’র সাবেক অর্থনীতিবিদ মনসুর বলেন বাংলাদেশ দাতাগোষ্ঠীর পরামর্শ অনুযায়ী ভর্তুকি কমাতে পারলে তা হবে সরকারের জন্যে সবচেয়ে বড় অর্জন।
আপনার মতামত লিখুন :