ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরোনো সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। জবাবে পাকিস্তান বলেছে, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের সঙ্গে ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ শামিল। চিরবৈরী দুই দেশের এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির এক এমপি বাংলাদেশেও পানিপ্রবাহ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাঝেই বিজেপির এমপি নিশিকান্ত দুবে বাংলাদেশেও পানি সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে এই দাবি করেন।
দুবে বলেন, ‘গঙ্গার পানি চুক্তি ভুল ছিল এবং এটি স্বাক্ষর করে ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস সরকার একটি ভুল করেছিল।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আর কত দিন পানি ভাগাভাগি করা হবে? তিনি আরও বলেন, ‘আর কত দিন সাপকে পানি দেব? সময় এসেছে এদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার।’
ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন দুবে। সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই এলাকাগুলো সুরক্ষিত করার ওপর জোর দেন নিশিকান্ত দুবে। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করা প্রয়োজন।’
নিশিকান্ত দুবে আরও বলেন, ‘বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার বারবার বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ভাগাভাগি করা উচিত নয় এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। বাংলাদেশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের পানি দেওয়া বন্ধ করা উচিত।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন দুবে। তিনি বলেন, পেহেলগাম হামলার পর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ স্পষ্ট ছিল। তিনি যোগ করেন, ‘১৪০ কোটি ভারতীয়ের সমর্থন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রয়েছে এবং সারা বিশ্ব তাঁকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে দেখে। সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে তার দৃঢ় সংকল্প স্পষ্ট।’
বিহারের এক জনসভায় দেওয়া প্রথম প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, পেহেলগাম হামলার পেছনের সন্ত্রাসী ও ষড়যন্ত্রকারীদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। মোদি আশ্বাস দেন, সন্ত্রাসবাদ বিনা শাস্তিতে ছাড় পাবে না এবং নিরীহ প্রাণহানির বিচার নিশ্চিত করতে ভারত সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে। তিনি আরও বলেন, শাস্তি এতটাই কঠোর হবে, যা সন্ত্রাসীরা ভাবতেও পারবে না।
পেহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা একটি। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করে, ভারতীয়দের জন্য ভিসা স্থগিত করে এবং ভারতীয় উড়োজাহাজগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। অনুবাদ: আজকের পত্রিকা।