আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনে এবার একটুখানি স্বস্তির হাওয়া বইল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাবের মধ্যেও ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আপাতত রক্ষা পেয়েছে, যা বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। খবর রয়টার্স
ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনার ফাঁকেই এই আশার আলো দেখতে পান সবাই। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে, আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগও সাময়িকভাবে দূর হয়েছে। তবে গভীরে ছিল একটি বড় প্রশ্ন, বিশ্ব কি এখনও মার্কিন ডলারকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ধরে রাখতে পারবে?
ট্রাম্পের ফেডের প্রতি আক্রমণ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দিয়েছিল। তবে ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্তের হুমকি থেকে পিছিয়ে আসায় ও আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব বজায় রাখার ইঙ্গিত আসায় কর্মকর্তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রবার্ট হোলজম্যান বলেন, ‘এই সপ্তাহটি ছিল সতর্ক স্বস্তির। তবে এটি চূড়ান্ত নয়, উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ফেড ও দুই ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারালে বৈশ্বিক ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের ঋণ ও বন্ড বিপদের মুখে পড়ত।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প কেউ নয়, একে অর্থনীতির পরিভাষায় ‘কিন্ডলবার্গার ট্র্যাপ’ বলা হয়। ইউরো কিছুটা জনপ্রিয় হলেও তার সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। ২০টি ইউরোজোন সদস্যের মধ্যে কেবল জার্মানিরই সেই মানের অর্থনৈতিক শক্তি রয়েছে। ফ্রান্সসহ অনেক দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়ে, আর রাশিয়ার সান্নিধ্যে থাকা বল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ঘিরে ভয়ের মেঘ কখনোই পুরোপুরি কাটে না। জাপান অর্থনীতির আকারে ছোট হয়ে গেছে এবং চীনের মুদ্রা এখনো অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত- ফলে, আজও ডলারই একমাত্র নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।
পোল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী আন্দ্রেজ ডোমানস্কি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপরিহার্য। আমরা খুশি তারা থাকছে।’
বিশ্লেষকদের ধারণা, সাম্প্রতিক বাজার অস্থিরতা ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণে পরিবর্তন এনেছে। সিটির বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ নাথান শিটস মন্তব্য করেন, ‘পাওয়েলকে বরখাস্তের হুমকিতে মার্কিন বাজারের প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে। এটা তাদের দেখিয়ে দিয়েছে, একটি ভুল সিদ্ধান্ত কতটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।’
যদিও আপাতত ঝড় থেমেছে, তবে সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখন মার্কিন নেতৃত্বের নতুন ভারসাম্যের দিকে তাকিয়ে আছে- আশায়, সন্দেহে এবং কিছুটা ভয়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কিছুটা সংযত হয়েছে কারণ সাম্প্রতিক বাজার অস্থিরতা তাদের সতর্ক করেছে। সিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ নাথান শিটস বলেন, ‘জে পাওয়েলকে বরখাস্তের হুমকির পর মার্কেটের দ্রুত পতন ট্রাম্প প্রশাসনকে বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছে।’
বিশ্ববাসী এখন চায়, যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বের ভূমিকা ধরে রাখুক, যদিও ভবিষ্যতে ঝড় আরও আসতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা। অনুবাদ: চ্যানেল২৪