চলতি মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশিমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। এর ফলে বাংলাদেশের বিশাল পোশাক খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হচ্ছে।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার মাধ্যমে এতদিন বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে সারা বিশ্বে পণ্য রপ্তানি করতে পারত। কিন্তু এটি বাতিল করায় বাংলাদেশ সেই সুবিধা হারাল।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার কারণে আমাদের বিমানবন্দর ও বন্দরে উল্লেখযোগ্য যানজট তৈরি হচ্ছিল।’
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালে ভারতের সঙ্গে এই সুবিধা চালু করেছিলেন।
তবে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এর ফলে বাণিজ্যে ‘কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।’ তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘দিল্লি বা কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে পণ্য ট্রানজিট করার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। এ জন্য আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাইনি বা পাল্টা ব্যবস্থা নিইনি।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা প্রতি সপ্তাহে মোট ২০০০ থেকে ২৪০০ টন পণ্যের মধ্যে প্রায় ৬০০ টন পণ্য ভারতীয় বিমানবন্দর দিয়ে পাঠাতেন।
নয়া দিল্লিভিত্তিক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ থিংক ট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে ব্যাহত করতে পারে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে শিপিং খরচ বাড়বে এবং পণ্য সরবরাহের সময় দীর্ঘ হবে। অজয় শ্রীবাস্তব আরও বলেন, ভারতের বন্দরগুলো বৈশ্বিক বাজারে দ্রুত এবং সস্তা পথে সুবিধা দিত। বিশেষ করে পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশি পোশাক চালানের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা শ্রীবাস্তব সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ চীনকে লালমনিরহাটে একটি বিমান ঘাঁটি সংস্কারে সাহায্যের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই ঘাঁটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের কাছাকাছি।
তিনি বলেন, এটি ‘নয়াদিল্লিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।’ এই এলাকাটিকে ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় ‘একটি প্রধান দুর্বলতা’ হিসেবে দেখা হয়। শিলিগুড়ি করিডর একটি সরু ভূখণ্ড। এটি চিকেনস নেক নামেও পরিচিত। এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করে। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত এবং ২০১৭ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে ৭৩ দিনের সামরিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া দোকলাম মালভূমিরও কাছাকাছি।
গত মার্চের শেষের দিকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিং সফরে যান। সেখানে তিনি বাংলাদেশে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। ওই সময়ে তিনি ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে নিয়েও মন্তব্য করেন।
ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরাই এই অঞ্চলের (সেভেন সিস্টার্স) সমুদ্রে প্রবেশের একমাত্র অভিভাবক। সুতরাং, এটি এক বিশাল সম্ভাবনা খুলে দেয় এবং চীনের অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে।’
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ সরকার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে দ্রুত পরিকল্পনা করছে। স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল সিলেট বিমানবন্দরের একটি ভয়েজার এয়ারলাইনস ফ্লাইটে করে স্পেনে ৬০ টন পোশাক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কবির আহমেদ নিক্কেইকে বলেছেন, ঢাকার প্রধান বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা সীমিত। এ কারণেই অনেক রপ্তানিকারক ভারতে পণ্য পাঠাতেন। ঢাকার বিমানবন্দর থেকে রপ্তানির জন্য কার্গো চার্জ ভারতের বিমানবন্দরের চেয়ে প্রতি কিলোগ্রামে ৭০ থেকে ৮০ ইউএস সেন্ট বেশি। সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহনের খরচ যোগ করেও অনেক সময় ভারতের মাধ্যমে পাঠানো সস্তা ছিল। অনুবাদ: চ্যানেল২৪