ভারতের সঙ্গে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ নিজেদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়কেই ডেকে আনছে বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্ব এবং তাতে বাংলাদেশের নাগরিকের দুরবস্থা বাড়ছে বই কমছে না বলে সে রাষ্ট্রের সরকারকে বার্তা দিল সাউথ ব্লক। শেখ হাসিনাকে সরানোর পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ক্রমশ বছর পূর্তির দিকে এগোচ্ছে। তার আগেই এই বার্তা।
সূত্রের মতে, ঘরোয়া ভাবে ছ’টি বিষয়কে নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ত্রুটিরেখা তুলে ধরতে চাইছে সাউথ ব্লক। এক, ভারতের সঙ্গে কৃত্রিম সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি করে বন্দর বন্ধ করে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ আটকে রাখা। দুই, যারা নিজেরাই ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, সেই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে বিকল্প অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা চাইছে ঢাকা। তিন, দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে হাঁফ ছাড়ার সুযোগ না করে, ক্রমাগত রাজনৈতিক লাভের সন্ধান করে যাওয়া। চার, একের পর এক বস্ত্র শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়া। পাঁচ, মুদ্রাস্ফীতি, ছয়, বেকারত্বের বৃদ্ধি।
গতকালই ঢাকায় পাকিস্তানের বিদেশসচিব আম্মা বালোচের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশসচিব মহম্মদ জসীমউদ্দিন। ১৫ বছর পর দু’দেশের মধ্যে এই বৈঠকের দিকে ‘নজর রাখা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। নয়াদিল্লির বক্তব্য, যে পাকিস্তান সরকার নিজেই দেশবাসীকে রুটি খাওয়াতে পারে না, ভারত-বিরোধিতা দেখাতে গিয়ে তার উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভর করা মুর্খামি ছাড়া কিছু নয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বিদেশসচিব পর্যায়ের ওই বৈঠকে করাচি এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি নৌপরিবহনের বিষয়ে কথা পাকা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিমান যোগাযোগ চালু করা হবে বলেও স্থির হয়েছে। এই সামগ্রিক পদক্ষেপ নয়াদিল্লির সঙ্গে আগামী দিনের সম্পর্ক তিক্ত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত এবং বাংলাদেশ বাণিজ্যনীতির প্রশ্নে 'শঠে শাঠ্যৎ' পন্থা নিয়ে চলছে কি না, এ বার সেই প্রশ্ন ক্রমশ বড় আকার নিতে চলেছে। কয়েক দিন আগেই তৃতীয় দেশে পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করেছে ভারত। এরপর ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সামনে এনেছে বাংলাদেশ। সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, সুতো আমদানি বন্ধের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা। কিন্তু তারও আগে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত তিনটি স্থলবন্দর এবং একটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করেছে ইউনূস সরকার। এর ফলে ভারতের বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাধাপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই দাবি করছে নয়াদিল্লি। বক্তব্য, এতে বাণিজ্যের ক্ষতিই শুধু নয়, দীর্ঘমেয়াদে লোকসান হবে বাংলাদেশের নাগরিকদেরও।
গত কয়েক মাসে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুর মিলিয়ে ৬৮টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে বলে খবর। এ ছাড়া আগামী মে মাস থেকে ছ’টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা করেছে কেয়া গ্রুপ। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্রের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাদায়ী ঋণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে৷ আবার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক কারখানার মালিক আত্মগোপনে থাকায় বেশ কিছু কারখানা রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, কিছু কারখানা উৎপাদন-ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না৷ এ সব কারখানার শ্রমিকদের অনেকেই কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আন্দোলনের কারণে প্রায়ই বন্ধ থাকছে সড়ক-মহাসড়ক। ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে বলে খবর।