শিরোনাম
◈ পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কাজের অগ্রগতি কেমন? ◈ দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার ◈ আরও ৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন ◈ স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে ◈ স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে নারী বিশ্বকা‌পের মূলপর্বের দ্বারপ্রা‌ন্তে বাংলাদেশ ◈ আমরা খেলেছি গাজার জন্য, আন্ডারডগ হ‌য়েও চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনের মেয়েরা ◈ ১৫ বছর পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে বসছে ঢাকা-ইসলামাবাদ ◈ আমাদের পূর্ণ গতিতে এগোতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা ◈ বজ্রপাতে নেত্রকোনায় তিনজন নিহত ◈ বাংলাদেশে ফের পূর্ণ সক্ষমতায় আদানির  দুই ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৪২ দুপুর
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে আলোচনা চলাকালেই কেন শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

রয়টার্স, আনাদোলু: একদিকে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাসকাটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

পারমাণু কর্মসূচি নিয়ে এই আলোচনাকে উভয় পক্ষই ‘ইতিবাচক’ ও ‘গঠনমূলক’ বলে আখ্যায়িত করলেও, এ সময়েই পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিমান ও সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আলোচনার পটভূমি

শনিবার (১২ এপ্রিল) মাসকাটে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম পরোক্ষ আলোচনা। দীর্ঘদিন পর পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এমন আলোচনায় বসা দুই দেশের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। আলোচনার দ্বিতীয় দফা রোমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে—এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি।

হঠাৎ কেন সামরিক শক্তি বৃদ্ধি?

আলোচনার ঠিক মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন সামরিক প্রস্তুতি কী বার্তা দিচ্ছে? এ নিয়ে উদ্বেগ ও কৌতূহল উভয়ই বাড়ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সে কারণে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সেখানে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

যদিও পেন্টাগন নির্দিষ্ট করে বলেনি কত সংখ্যক যুদ্ধবিমান কিংবা কোন কোন ঘাঁটিতে এগুলো মোতায়েন করা হচ্ছে, তবুও মার্কিন বিমান বাহিনীর এক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান পাঠানো হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ায়।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরাক, কাতার, জর্ডান এবং কুয়েতে এই বোমারু বিমান মোতায়েন করতে পারে ওয়াশিংটন।

পুরোনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পুরোনো কৌশলই অনুসরণ করছে—একদিকে আলোচনার টেবিলে বসে শান্তির বার্তা, অন্যদিকে সামরিক হুমকি দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা। অতীতে লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে এই কৌশল প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। কারণ, ইরান এবার আলোচনায় রাশিয়া ও চীনের সমর্থন নিয়ে বসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুটি পরাশক্তির অংশগ্রহণ ইরানকে আগের চেয়ে অনেক বেশি কূটনৈতিক শক্তি দিয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা

ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আরাঘচি চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে মস্কো সফরে যাচ্ছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মাসকাট আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করতেই এই সফর।

রাশিয়া বরাবরই ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং পরমাণু আলোচনার অন্যতম প্রধান অংশীদার। ফলে ইরানের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তে রাশিয়ার মতামত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ও গাদ্দাফির ছায়া

ইরানের অভ্যন্তরেও এ আলোচনা নিয়ে চলছে বিতর্ক। অনেক কট্টরপন্থি এই আলোচনায় ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাঁদে’ পা দিয়েছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, লিবিয়ার সাবেক নেতা গাদ্দাফির মতো পরিণতি হতে পারে খামেনিরও।

উল্লেখ্য, গাদ্দাফি গণবিধ্বংসী অস্ত্র ত্যাগ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বিদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এই ঘটনার উদাহরণ টেনে কট্টরপন্থিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতার বিরোধিতা করছেন।

ট্রাম্পের হুমকি

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (১৩ এপ্রিল) সাংবাদিকদের জানান, তিনি ইরান ইস্যুতে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চান। আলোচনায় ব্যর্থ হলে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে আলোচনার মাধ্যমে ইরানকে ‘প্রশমিত’ করতে চাচ্ছে, অন্যদিকে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চাপ বজায় রাখার কৌশল নিচ্ছে।

আর ইরান, অতীত অভিজ্ঞতা ও মিত্র শক্তির সমর্থনকে সামনে রেখে এই চাপের কূটনৈতিক জবাব দিতে প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে এই সামরিক উত্তেজনা আসলে কতটা স্থিতিশীলতা বয়ে আনবে, তা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র : কালবেলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়