শিরোনাম
◈ বৈশাখের দিনে রাজধানীতে দিনভর যত আয়োজন ◈ আলা‌ভে‌সের বিরু‌দ্ধে রিয়াল মা‌দ্রিদের কষ্টার্জিত জয়, লাল কার্ড এমবাপ্পের ◈ বাংলাদেশকে ১০০০ শয্যার হাসপাতাল উপহার দেবে চীন: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ◈ রেকর্ড গড়ার একদিন পরই কমলো স্বর্ণের দাম ◈ ডোনাল্ড ট্রাম্প কি মানসিকভাবে সুস্থ, যা জানালেন চিকিৎসক ◈ বাবা-ছেলেকে সালিসে না আসায় বাড়িতে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা ◈ ১৮ হাজার পুলিশ থাকবে আনন্দ শোভাযাত্রার নিরাপত্তায়, সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলবে ড্রোন দিয়ে ◈ যাত্রাবাড়ীতে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও ট্রাকসহ এক মাদক কারবারি গ্রেফতার ◈ মডেল-অভিনেত্রী মেঘনার বাবা সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক ও বাগদান নিয়ে যা বললেন ◈ শুভেচ্ছা সফরে রাশিয়ান নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজের চট্টগ্রাম বন্দরে

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১৯ দুপুর
আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এক নজরে বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশদের ৮টি গণহত্যা

বিশ্ব ইতিহাসের পাতা তিনটি দেশের অপরাধে পূর্ণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার আড়ালে এই দেশগুলো যে কীরকম জঘন্য অপরাধ চালিয়েছে, ইতিহাসে তার রেকর্ড রয়েছে। আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইয়েমেনে এমন অপরাধ করেছে ব্রিটেন যা বিশ্ব ইতিহাসে অতুলনীয়।

১. আফগানিস্তানে ব্রিটিশ অপরাধ

প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪২) হেলমান্দ উপত্যকার দক্ষিণ অংশে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধটি ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য এশীয় অঞ্চলে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নামা প্রধান অভিযানগুলোর অন্যতম। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গ্রেট গেম নামে পরিচিত এই অভিযানটি। এই যুদ্ধে হেলমান্দের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয় এবং আফগানিস্তান জুড়ে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

২. ভারত দখল এবং মারাত্মক দুর্ভিক্ষ

বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে, ১৭৭০-এর দশকে ব্রিটিশ বাহিনীর ভারত দখলের সময়, দুর্ভিক্ষ, রোগ, ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের কারণে অথবা জোরপূর্বক শ্রমের চাপের কারণে শুধুমাত্র বাংলা প্রদেশে ১ কোটিরও বেশি ভারতীয় মারা গিয়েছিল। ১৯৪২ সাল থেকে, ব্রিটিশ সরকার এবং চার্চিলের ঔপনিবেশিক সিদ্ধান্তের কারণে ভারতে আরেকটি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যার ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ ভারতীয় মারা যান।

৩. দক্ষিণ আফ্রিকায় বোয়ার যুদ্ধ

বোয়ার যুদ্ধের সময় (১৯০০-১৯০২) ব্রিটেন অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে কয়েক হাজার নিরপরাধ মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম শিবিরে বন্দী করে। এক বছরের মধ্যে ওই শিবিরগুলোতে ১০ শতাংশ বোয়ার মানুষ রোগ-শোক এবং অনাহারে মারা যায় যাতে ব্রিটিশ সরকার আফ্রিকায় তার ঔপনিবেশিক এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিটিশ নীতির ফলে আনুমানিক ৪৮,০০০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল, যার মধ্যে নারী এবং শিশুও ছিল।

৪. ১৯১৭-১৯১৯ সালের ইরানি গণহত্যা

ইতিহাস জুড়ে ইংল্যান্ড ইরানে অসংখ্য অপরাধ করেছে। সেই অপরাধগুলোর মধ্যে একটি ছিল ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ৪০% গণহত্যা। অন্য কথায় এই বছরগুলোতে ব্রিটেন ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ থেকে ১ কোটি মানুষকে হত্যা করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নথি অনুসারে ১৯১৪ সালে ইরানের জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি। ১৯১৯ সালে ইরানের এই জনসংখ্যা কমে ১ কোটি ১০ লক্ষে দাঁড়িয়েছিল।

৫. ব্রিটেন কর্তৃক ইরাকে রাসায়নিক বোমা হামলা

১৯১৯ সালে উইনস্টন চার্চিলের নির্দেশে ইরাকে রাসায়নিক বোমা হামলা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক ট্র্যাজেডিগুলোর একটি। সেই সময় পশ্চিম এশিয়ায় ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর কমান্ড আরবদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষার অনুরোধ করে। তৎকালীন যুদ্ধ সচিব উইনস্টন চার্চিল ইরাকি উপজাতিদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন। ১৯২০ সাল পর্যন্ত ওই প্রাণঘাতী গ্যাসের ব্যবহার অব্যাহত ছিল। ব্রিটিশ বিমান বাহিনী ১৯২৫ সালে ইরাকের সুলায়মানিয়ার জনগণকে দমন করার জন্য আবারও ওই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে।

৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের দ্বারা জার্মান জনগণের ওপর গণহত্যা

১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মান রাইখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার দুই দিন পর ব্রিটেন, জার্মান শহরসহ বেসামরিক জনবসতিতে বোমা হামলা শুরু করে। ১৯৩৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, কক্সহেভেন এবং উইলহেল্মশেভেন শহরে প্রথম বিমান হামলা চালানো হয়। ১৯৪০ সালের ১২ জানুয়ারী ওয়েস্টারল্যান্ড শহরে বোমা হামলা চালানো হয়। ২০ মার্চ, কিয়েল এবং হার্নিয়াম শহরে ১১০টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক এবং অগ্নিসংযোগকারী বোমা বর্ষণ করা হয়েছিল। এই হামলায় একটি হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৪০ সালের এপ্রিলে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বোমারু বিমানগুলো এমন শহরগুলোতে ক্রমবর্ধমান আক্রমণ শুরু করে যেসব শহরে কোনও সামরিক স্থাপনা ছিল না।

৭. উত্তর আয়ারল্যান্ডের জনগণের ওপর হত্যাকাণ্ড

১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, ব্রিটিশ সৈন্যরা ৩০০ জনেরও বেশি আইরিশ পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে হত্যা করেছিল। নিহতরা সকলেই নিরস্ত্র ছিল এবং কেউই ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য মারাত্মক হুমকি ছিল না। নিহতদের মধ্যে ক্যাথলিক পুরোহিত, বয়স্ক মহিলা, শিশু এবং এমনকি কিশোরী মেয়েরাও ছিল। ব্রিটিশ সরকারের নথিপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে-১৯৭২ সালে, উত্তর আয়ারল্যান্ডে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল।

৮. ইয়েমেনি জনগণের ওপর গণহত্যা

১৯৬৩-১৯৬৬ সালে ইয়েমেনের এডেনের নির্যাতন শিবিরগুলো ব্রিটিশদের অপর একটি অপরাধের উদাহরণ। ১৯৬০-এর দশকে, ইয়েমেনিরা ইয়েমেন বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করেছিল। ব্রিটিশরা ভিন্নমত দমনের সর্বোত্তম উপায় হিসেবে ভয়াবহ নির্যাতন কক্ষ তৈরি করেছিল। প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় রেফ্রিজারেটেড কোষে রাখার ফলে তাদের অনেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই কেন্দ্রগুলোতে সিগারেট দিয়ে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, নগ্ন বন্দীদের বর্শার উপর স্থাপন করা এবং ধর্ষণ করাসহ অন্যান্য যৌন নির্যাতনের ঘটনা ব্রিটিশ অপরাধযজ্ঞের জঘণ্য ইতিহাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়