লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মী প্রবাসী সাইজ উদ্দিন দেওয়ানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় বিএনপি নেতাসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে আধিপত্য বিস্তার নয়, ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় অভিযুক্তরা সাইজ উদ্দিনকে প্রথমে গুলি করে ও পরে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি পরিবারের। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছে তারা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ছুটি শেষে সাইজ উদ্দিনের স্পেন যাওয়ার কথা ছিল। স্পেন থেকে ভিসা পেলে স্ত্রী-সন্তানকেও এ বছর সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ৭ এপ্রিল তাকে হত্যা করা হয়। স্বজনদের দাবি প্রথমে সাইজ উদ্দিনকে গুলি করা হয়েছে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাকে ঘন্টাব্যাপী আটকে রাখা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
সাইজ উদ্দিনের বড় ভাই হানিফ দেওয়ান ও চাচাতো ভাই মেজন আলী দেওয়ান বলেন, ফারুক কবিরাজের অনুসারী ফারুক গাজি রমজানে একদিন এসে সাইজ উদ্দিনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। ওই টাকা না দেওয়ায় সাইজ উদ্দিনের ওপর তারা ক্ষিপ্ত ছিল। শ^শুর বাড়ি থেকে আসার পথে তাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাধা দেয়। হাত-পা ধরলেও তারা ছাড়েনি। পরে থানা থেকে পুলিশ এলে তারা ছেড়ে দেয়। এরপরও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে নিহতের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও তার ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীম ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জের ধরে দুই দফায় শামীম ও ফারুকের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ওই ইউনিয়ন বিএনসিহ সকল অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হয়।
৭ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেড়ি ও বাবুরহাট এলাকায় কৃষকদল নেতা শামীম গাজী ও ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচতি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক গাজীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন। ঘটনার সময় বিল্লাল মাঝি, আবু তাহের মাঝি, জিহাদ হোসাইনের বসতবাড়িতে শামীমের অনুসারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এর জের ধরেই ৮ এপ্রিল ফের হামলা চালিয়ে শামীম গাজীর অনুসারীরা ফারুক কবিরাজের লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা এখনো বিরাজ করছে।